জিয়াউর রহমান বেলাল
চাঁদপুর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বিপুল ক্ষমতার অধিকারী, ডাকসাইটে নেতা হয়েও নানা কারণে আজ খোদ বিএনপির কাছেই পরিত্যাজ্য। কী কারণে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপির কাছে পরিত্যাজ্য বা কঠোর সমালোচিত কিংবা বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন, স্থানীয় বিএনপি রাজনীতিতে কেনো হিরো থেকে জিরো হলেন তার মূল বা প্রকৃত কারণ খুঁজতে গিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার খায়েশের অপ্রকাশিত নানা চমকপ্রদ তথ্য-উপাত্তের ফিরিস্তি জনসমক্ষে চাউর হয়ে পড়ার তথ্যনির্ভর ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর পাওয়া গেছে। কেননা, যেখানে ক্ষমতাধর শফিক ভূঁইয়ার অনেক পরে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম কাজী জুয়েল দল থেকে বহিষ্কার হয়েও অনায়াসে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে সক্ষম হন, সেখানে শফিক ভূঁইয়ার সামান্য পদ-পদবী ও কার্যক্রম ৩ বছর ধরে স্থগিত থাকে কী কারণে, তার নেপথ্য শানে-নূযুল বা অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আলাদীনের চেরাগের ছোঁয়ায় রাতারাতি আলিশান বাড়ি-অত্যাধুনিক বিলাস বহুল গাড়ি-কোটিপতি হওয়ার কথা থলের বিড়ালের ন্যায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ছে। সেসব চমকপ্রদ নেপথ্য কাহিনীর আদ্যোপান্ত ও রহস্য জানা গেছে একাধিক বিশ্বস্ত ও গোপন সূত্রে। চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সেসব তথ্য-উপাত্ত দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের জন্যে পত্রস্থ করা হলো।
একটি সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের বিগত ৬ বছরের অধিককাল সময়ে চাঁদপুর পৌরসভা ও ৮ উপজেলাসহ চাঁদপুর জেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সমূহের কয়েক হাজার ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে প্রায় আড়াইশ� (২৫০টি) মামলা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতারকৃত দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা-তদবির করা তো দূরে থাক একদিনও তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেননি বা দলের দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর এতোটুকু প্রয়োজন বা তাগিদ অনুভব করেননি শফিক ভূঁইয়া। পক্ষান্তরে বিএনপির দুর্দিনের কাণ্ডারী হিসেবে বিশেষভাবে সুপরিচিত চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক আন্তরিকভাবে রাজনৈতিক সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে বিএনপির গ্রেফতারকৃত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের পাশে থেকে অদম্য মনোবলে মামলা-হামলা মোকাবেলা করতে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। এছাড়া শফিক ভূঁইয়া বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অন্য কোনো ব্যাপারেও কোনো খোঁজ-খবর রাখেননি। এ ব্যাপারে শফিক ভূঁইয়ার ওপর সবচে� বেশি অসন্তুষ্ট বা ক্ষিপ্ত চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকাকালে দলের নেতা-কর্মী-এমপি-মন্ত্রীদের দ্বিধাবিভক্তির মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরে গ্র�পিং সৃষ্টি করে তা অব্যাহত রেখে ব্যাপক দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল জিইয়ে রাখার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলেও চাঁদপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন সমূহের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অভিযোগের মাধ্যমে তথা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য দিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে ব্যাপক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে শফিক ভূঁইয়াকে দল থেকে একবার বহিষ্কার হন এবং পরবর্র্তীতে উক্ত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে প্রায় ৩ বছর যাবৎ কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্যের পদ সহ অন্যান্য পদ-পদবী ও কার্যক্রমে স্থগিতাদেশের শিকার হয়ে আছেন। তদুপরি বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক দুঃসময়ের ক্রান্তিকালে দলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বর্তমান সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে তথা চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।
সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মোঃ শফিকুর রহমান ভূঁইয়া চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময় চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ হতো সেসব কাজকর্ম মূলতঃ জেলা হেড কোয়ার্টারের তথা চাঁদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করতেন শফিক ভূঁইয়া। অবশ্য সে সময় স্থানীয় বিএনপি রাজনীতিতে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক কিংবা মাহবুুবুর রহমান শাহীনদের আগমন ঘটেনি। সেসব উন্নয়নমূলক কাজের মোট বরাদ্দের নির্দিষ্ট নেগোসিয়েশন মানির বিভিন্ন অংকের পার্সেন্টিজ নিয়মিতভাবে নিতেন শফিক ভূঁইয়া। এসব পার্সেন্টিজ থেকে চাঁদপুরের তৎকালীন ৬ এমপির মধ্যে একমাত্র জিএম ফজলুল হক ব্যতীত বাকি ৫ এমপি যথাক্রমে আ ন ম এহসানুল হক মিলন, মোঃ নূরুল হুদা, ফ্লাইট লেঃ (অবঃ) এসএ সুলতান টিটু, আলমগীর হায়দার খান ও এমএ মতিন বিভিন্ন অংকের ভাগ পেতেন। সেই �মিঃ পার্সেন্টিজ�-এর ইতিহাস অনেকেরই জানা। কিন্তু এতোদিন ভয়ে কেউ মুখ খোলেনি। এমনকি এসব কাজের সহায়তাকারী হিসেবে ডুলাধরা পার্সেন্টিজ সহকারী পর্যন্ত অনেকেই ঢাকায় আলিশান ফ্ল্যাট বাড়ি ও চাঁদপুরে কুঁড়ে ঘর থেকে আলিশান ভবন নির্মাণসহ রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। এছাড়া সে সময়ের প্রায় সকল ঠিকাদার-ই রাতারাতি আলিশান বাড়ি-গাড়ি-কোটিপতি বনে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। এমনকি সে সময় পৌর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ পাওয়া সামান্য একজন নন অফিসিয়াল সহকারীর গ্রামের বাড়ির বাইল পাতার বেড়ার ঘর পর্যন্ত আধুনিক পাকা ভবনে রূপান্তরিত হয়।
সূত্র আরও জানায়, শফিক ভূঁইয়া তৎকালে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি থেকে এসএ সুলতান টিটুকে চিরতরে বিদায় করার জন্য শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সর্বমোট ৫৪ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে শফিক ভূঁইয়া ২০০৬�র পরবর্তী এমপি নির্বাচনে টিটু সাহেবকে চাঁদপুরের বিএনপি রাজনীতি থেকে হটিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে শেখ মানিকের সাথে মৌখিকভাবে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হন যে, আপনিও (শেখ মানিক) এমপি নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন এবং আমিও (শফিক ভূঁইয়া) মনোনয়ন চাইবো। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যাকে চাইবেন মনোনয়ন দেবেন, পরে আমরা উভয়ে তা মেনে নেবো। এক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলীয় মারাত্মক কোন্দল মেটাতে শেখ মানিক, শফিক ভূঁইয়া, মাহবুবুর রহমান শাহীন ও রানিং এমপি টিটু সাহেবকে মনোনয়ন না দিয়ে চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ও মতলব দক্ষিণ) আসন থেকে জিএম ফজলুল হককে এনে চাঁদপুর-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ডাঃ দীপু মনির সাথে পরাজিত হওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির শেষ রক্ষা আর হয়নি। পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থিতা নিয়ে শেখ মানিকের সাথে শফিক ভূঁইয়ার ব্যাপক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টি হয়। এতে দলের কাউন্সিলরদের (মোট ভোট প্রায় ১২শ�) ৭৪ ভোটের ব্যবধানে শেখ মানিকের কাছে হেরে যান শফিক ভূঁইয়া। এরপরই শফিক ভূঁইয়া মাহবুবুর রহমান শাহীনের সাথে গিয়ে হাত মিলান। এ সময় বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছ থেকেও প্রায় ২ বছরে ২৫/৩০ লক্ষ টাকা অনায়াসে হাতিয়ে নেন বলে অসমর্থিত সূত্রটি দাবি করে। পরবর্তীতে শাহীন হার্টের রোগে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। এরপর শফিক ভূঁইয়া জিএম ফজলুল হকের সাথে কোরামের মাধ্যমে শেখ মানিকের অন্যতম বিরোধী হিসেবে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এ সময় বিভিন্ন কারণে শফিক ভূঁইয়া প্রথমে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও তা প্রত্যাহার করতে সক্ষম হন এবং পরবর্তীতে বিএনপির পদ-পদবী ও কার্যক্রম থেকে স্থগিত হয়ে প্রায় ৩ বছর ধরে বর্তমানে সে অবস্থাতেই রয়েছেন। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি বিগত প্রায় ৭ বছরে শফিক ভূঁইয়া সাবেক এমপি জিএম ফজলুল হকের কাছ থেকে দলের ও বিভিন্ন প্রয়োজনের অজুহাত দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে শোনা যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, হাসান আলী হাই স্কুলের মাঠে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে শফিক ভূঁইয়ার গ্র�প কর্তৃক বিএনপির সভামঞ্চ ভাংচুর করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বহিষ্কৃত হন। পরবর্তীতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে শফিক ভূঁইয়ার নানা রাজনৈতিক জঞ্জাল শেখ মানিক বিভিন্নভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হলে অবশেষে শফিক ভূঁইয়ার কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সহ অন্যান্য পদ-পদবী ও কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।