ফরিদগঞ্জে এবার ভুয়া ডাক্তার এস এন রঞ্জু রানী পালের ভুল চিকিৎসায় সুমী আক্তার নামে অসহায় এক নারীর নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরে গোপন সমঝোতার পর ১০ হাজার টাকা সুমির স্বামীর হাতে তুলে দিয়ে তার স্বাক্ষর নিয়ে ওই নারী ও তার স্বামী ইসমাইল হোসেন রুবেলকে চলে যেতে বাধ্য করেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। ওই ঘটনাটি যাতে ফাঁস না হয় সেজন্যে ডাক্তারের পক্ষে এলাকার একটি মহল জোরালো ভূমিকায় রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত ঘটনার অভিযোগ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই নাছির উদ্দীন ঘটনাস্থলে আসেন। এক পর্যায়ে সুমি আক্তারের স্বামী ইসমাইল হোসেন রুবেলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি কাগজে সই নেয়ার পর সুমি ও তার স্বামীকে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করেছে। এ ঘটনাটি যাতে ফাঁস না হয় সেজন্য সুমির পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তাকে জোরপূর্বক ১০ হাজার টাকা তুলে দেয়।
সরেজমিনে সুমির বাড়িতে গেলে তিনিসহ তার পরিবার সাংবাদিকদের জানায়, গত ২১ আগস্ট দুপুরে উপজেলার পূর্ব সন্তোষপুর গ্রামের সুমি আক্তার প্রসব বেদনা নিয়ে ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পালের স্ত্রী রঞ্জু রানী বাসায় আসে। এক পর্যায়ে পরদিন ভোরে রঞ্জু রানীর বলপ্রয়োগে সুমী আক্তারের এক মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করায়। মৃত বাচ্চার মাথায় কেচির কাটা দৃশ্য দেখে সুমী আক্তার ও তার স্বামী চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করে বলতে থাকে ভুল চিকিৎসায় তার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে। সিজার করে বাচ্চা প্রসবের জন্যে বহু আকুতি করলে রঞ্জু রানী পালের বাধার মুখে পড়েন তারা।
এ ঘটনার পর ফরিদগঞ্জ থানার ওসির বরাবরে রঞ্জু রানীর ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মারা যাওয়ার অভিযোগ দেয়া হয় সুমীর পক্ষ থেকে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার এসআই নাছির উদ্দীন ঘটনাস্থল ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পালের বাসায় আসেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ও ফরিদগঞ্জের কয়েকজন ব্যক্তির উপস্থিতিতেই সুমি আক্তারের স্বামী ইসমাইল হোসেন রুবেলের স্বাক্ষর নিয়ে তার স্বামীর হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেয় এবং তা নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করে।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে এসে থানার এসআই নাছির উদ্দীন বলেন, রোগীর পরিবারটি গরীব বলে তাদের হাতে ডাক্তারের পক্ষ থেকে কিছু টাকা দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করে দেয়া হয়েছে।
তবে অভিযুক্ত রঞ্জু রানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার স্বামী ডাক্তার পরেশ চন্দ্র পালের সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম শিপন বলেন, রঞ্জু রানী পাল একজন অবসরপ্রাপ্ত নার্স। গর্ভবতী রোগীদের জন্যে এখন আমাদের সরকারি হাসপাতাল, কমিনিউটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার ও ভিজিটর রয়েছে। কিন্তু রঞ্জু রানী পাল ডাক্তার না হয়েও কেন রোগীর চিকিৎসা কিংবা গর্ভবতী রোগী দেখেন তা আমার বোধগম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, গর্ভবতী রোগীর বাচ্চা প্রসবে পরিস্থিতি খারাপ হলে তাৎক্ষণিক সিজার করার জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠাতে হয়। কিন্তু তা না করে রঞ্জু রানী পাল নিজ বাসায় বসে প্রসূতি রোগী রেখে যেভাবে নরমাল প্রসব করান তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।