রেল কানুনগোর জিআরপি থানায় এজাহার ও মডেল থানায় অভিযোগ বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি মসজিদ কর্তৃপক্ষের অঙ্গীকার ভঙ্গের পাঁয়তারা
স্টাফ রিপোর্টার:
আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ নিয়ে যে কতো অনিয়ম হতে পারে, মুসলি্লদের স্বার্থরক্ষার চেয়ে কারো বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষার যে কতো হীন প্রয়াস চলতে পারে, এর জ্বলন্ত নমুনা হচ্ছে চাঁদপুরের বায়তুল আমিন মসজিদ। এটির পূর্ণ নাম বায়তুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদ। এটি চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচ রাস্তার মোড় ‘শপথ চত্বরে’র পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
মুসলি্লদের পক্ষ থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত এক খোলা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন জামে মসজিদ নামে রেলওয়ের বৈধ অনুমোদনকৃত মসজিদটি বাদ দিয়ে অন্যের বৈধভাবে লীজপ্রাপ্ত পুকুর জবরদখল করে আশির দশকে নূতন নামে আত্মপ্রকাশ করে ‘বায়তুল আমিন জামে মসজিদ’। একতলা ভবনেই ২৮ বছর চলছিলো এ মসজিদের কার্যক্রম। কিন্তু এ জন্যে নূতনভাবে নেয়া হয়নি রেল কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন। মসজিদের নামেও যোগ করা হয়নি ‘রেলওয়ে’ শব্দটি। আর মসিজদ কমিটির অনুমোদন নেয়া তো দূরে থাক। এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়ে নূতন কমিটি ঘোষণা করলেও বিদ্যমান কমিটি স্থানীয় আদালতে মামলার আশ্রয় নেয়। এভাবে চলতে থাকে বছরের পর বছর। ২০১২ সালে মসজিদ কমিটি মসজিদের নামে ‘রেলওয়ে’ শব্দটি যোগ করে মসজিদের একতলা ভবন ভেঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ ও পৌরসভার কোনো অনুমোদন নেয়নি। এজন্যে রেল কর্তৃপক্ষ জিআরপি থানায় দুটি এজাহার করে। উপর্যুপরি মসজিদের একতলা ভবনের যে জায়গায় মুসলি্লরা নামাজ পড়েছেন তথা সেজদাহ দিয়েছেন বছরের পর বছর, সে জায়গায় মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে দোকান বরাদ্দের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে গ্রহণ করেন অগ্রিম সেলামী বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ। এটি ধর্মীয়ভাবে সিদ্ধ না হওয়ায়, বিশেষ করে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী না হওয়ায় সচেতন মুসলি্লবৃন্দ ও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ উত্থাপিত হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়।
২০১৩ সালে সিঁড়ির কাজ অসমাপ্ত রেখে বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে বায়তুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদের নূতন ভবনের দোতলা ও তিনতলায় উঠে মুসলি্লদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই বয়স্ক মুসলি্লগণ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েন এবং বিক্ষুব্ধ হন। বিশেষ করে নিচতলায় নামাজের ব্যবস্থা না নিয়ে দোকানের অবকাঠামো নির্মাণ করায় মুসলি্লসহ সচেতন মহলে বিরূপ সমালোচনার ঝড় উঠে। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত দীর্ঘ খোলা চিঠিতে প্রতিবাদ সহ এমন সমালোচনার আনুষ্ঠানিক প্রতিফলন ঘটান চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মসজিদের মুসলি্ল আলহাজ্ব মোশ্তাক হায়দার চৌধুরী। এতে বিপাকে পড়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ এমতাবস্থায় চাঁদপুরের প্রায় সকল দৈনিকে বায়তুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদ উন্নয়ন কমিটির পক্ষে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। মসজিদের নকশার সুদৃশ্য ছবি সম্বলিত এ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম দেয়া হয় ‘বায়তুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ’। এ বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে বলা হয়, এখানে মসজিদ ছাড়া কোনো বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার কোনো ইচ্ছাই আমাদের নেই। এ ধরনের ভৌতিক গুজব শুধুমাত্র কাল্পনিক বৈ অন্য কিছু নয়। তাছাড়া দোকান বরাদ্দের নামে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা বৈ অন্য কিছু নয়। তা সত্ত্বেও বলতে চাই, সর্ব বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
এ বিজ্ঞপ্তিতে মসজিদের নিচতলায় কেনো নামাজের ব্যবস্থা করা হয়নি তার কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা মসজিদ কর্তৃপক্ষ দেয়নি। বরং ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে বিজ্ঞপ্তিতে প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে নিচতলায় দোকান নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ রেলওয়ে লাকসাম কাছারী অফিসের কানুনগো হাজী আবদুল হালিম ভঁূইয়া চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং ডিইও/চট্ট:/অবৈধ স্থাপনা/লাকসাম কাছারী/১৫ তারিখ : ০৬/৮/২০১৫ খ্রিঃ। এ অভিযোগে তিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি এম. এ. বারী খান ও সেক্রেটারী আবু তাহেরের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ রেলওয়ের বিনা অনুমতিতেহ বর্তমানে প্রায় ৭৫৫৩ বর্গফুট ভূমিতে দ্বিতল ভবন পাকা মসজিদ এবং ৩৬১৯ বর্গফুট ভূমিতে পাকা সিঁড়ি নির্মাণ আরম্ভ করিলে তাহাদের বিরুদ্ধে ২২/০৭/২০১৩ ও ২৪/০৭/২০১৩ তারিখে স্থানীয় রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় এজাহার করা হয় এবং চাঁদপুর মডল থানাকে অনুলিপির মাধ্যমে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে অনুরোধ করা হইয়াছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ বাধা অমান্য করে এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে নাই। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্ণিত মসজিদের নিচের অংশ খালি ছিল। বর্তমানে অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ মসজিদের নিচতলায় প্রায় ৪০/৪৫টি ছোট-বড় দোকান নির্মাণ আরম্ভ করিলে আমি সরজমিনে নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করে কাজ বন্ধ করিয়া দিয়াছি। কিন্তু ধারণা করা যাইতেছে যে, তাহারা তাহাদের সুযোগ মতে যে কোন সময় পুনরায় নির্মাণ কাজ করিতে পারে। অতএব, বর্ণিত বিবরণীর আলোকে রেলওয়ের সম্পত্তি/সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলকারীর হাত হইতে রক্ষা করার স্বার্থে সরেজমিনে তদন্ত করে আর যাহাতে অবৈধভাবে কোন প্রকার নির্মাণাদি করিতে না পারে প্রচলিত নিয়মে আইনানুরূপ ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হইল।
এ অভিযোগের পরও মসজিদের নিচতলায় মার্কেটের কাজ চলমান থাকায় রেল কর্তৃপক্ষ ২২ আগস্ট ২০১৫ তারিখে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় এবং ২৩ আগস্ট ২০১৫ তারিখে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ পত্রিকায় বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ বিজ্ঞপ্তিটি যার নামে প্রকাশিত হয় তিনি হচ্ছেন লিয়াকত শরীফ খান, বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম এবং ডেপুটি কমিশনার (রেলওয়ে ল্যান্ডস্ এন্ড বিল্ডিংস্)। এ বিজ্ঞপ্তিতে লিখা হয় যে, এতদ্বারা সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের সামনে শপথ চত্বর সংলগ্ন বায়তুল আমিন জামে মসজিদ নামে পরিচিত নিচতলায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন ভূমি রেলওয়ের বিনা অনুমতিতে এবং সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মসজিদের নাম ব্যবহার করে নিচতলায় ৩২টি দোকানঘর নির্মাণ করে প্রতারণামূলকভাবে নিরীহ জনসাধারণের নিকট বিক্রয়/বরাদ্দ প্রদান করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মর্মে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত ভূমি বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান/সংস্থা বা মসজিদ কমিটি কর্তৃক মসজিদের নাম ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নির্মিত দোকানঘর সমূহ বরাদ্দ দেয়ার কোনো এখতিয়ার/ক্ষমতা নেই। যদি কেউ উক্ত মসজিদ কমিটির নিকট হতে দোকানঘর বরাদ্দ গ্রহণ করেন তাহা তিনি নিজ দায়-দায়িত্বে করবেন। এজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না।
এ বিশেষ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও মসজিদ কর্তৃপক্ষ দোকান নির্মাণ বন্ধ রাখেনি বিধায় রেলওয়ের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা মসজিদ কমিটির সাথে জড়িত তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে একটি পত্র লিখেন। এতে স্বাক্ষর করেন মোঃ জাহান শরীফ (এসএই/কার্য, চাঁদপুর), মোঃ মাহবুবুর রহমান (টিটিই, চাঁদপুর ও সভাপতি, চাঁদপুর রেলওয়ে শ্রমিক লীগ), মোঃ খোরশেদ আলম (এইচ/আরএনবি), মুহাম্মদ হোসেন মজুমদার (এসএম/চাঁদপুর), আবদুল হান্নান (সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর রেলওয়ে শ্রমিক লীগ), সাহজাহান (বিএ, চাঁদপুর কোর্ট) ও হুমায়ুন কবির (টিটিই, চাঁদপুর)। এ পত্রে তাঁরা লিখেন, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, ১। মসজিদ প্রতিষ্ঠালগ্নে রেল কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল যে, মসজিদের জায়গায় কোন অবস্থাতেই কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি বা পরিচালনা করা যাবে না ২। মসজিদ প্রতিষ্ঠালগ্নে যখন চাঁদপুরস্থ রাজনৈতিক মহল, ব্যবসায়িক মহল, মিডিয়া মহল, রেল কর্মচারী মহলসহ সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে নিচতলা খালি রেখে মসজিদ তৈরিতে প্রশ্ন দেখা দেয়, তখন রেলওয়ের দু-একজন কর্মচারীকে সাথে নিয়ে বর্তমান সভাপতি সাহেব অত্র চাঁদপুরস্থ রেল কর্মচারী সহ সর্বস্তরের জনগণকে আশ্বস্ত করিয়াছিলেন যে, কোন অবস্থাতেই উক্ত স্থানে কোন দোকানপাট হবে না। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সহিত লক্ষ্য করা যাইতেছে যে, মসজিদের কোটি কোটি টাকার কাজ হইলেও কমিটি কর্তৃক কোন মিটিংয়ের মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হইতেছে না। সে ব্যাপারে আমাদের জোরালো আপত্তি না থাকিলেও বর্তমানে নিচতলায় রেলওয়ের পূর্ব অনুমতি ব্যতিরেকে কিভাবে দোকানপাট হইতেছে যাহা আমাদের মোটেও জানা নেই। যেহেতু আমরা নিম্ন বর্ণিত সদস্যগণ মসজিদ কমিটির সদস্য হিসাবে চিহ্নিত বিধায় ইতিমধ্যে স্থানীয় জনগণসহ মিডিয়া ব্যক্তিগণ আমাদিগকে দায়ী করিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করিতেছেন, যাহার কোন সদুত্তর আমরা দিতে পারিতেছি না। এমতাবস্থায় রেল কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তবিহীন নিচতলায় দোকানপাটের কাজ বন্ধ রাখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা যাইতেছে। অন্যথায় যে কোন প্রশ্নের মোকাবেলায় আপনারাই দায়ী থাকিবেন। এ পত্রের অনুলিপি দেয়া হয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব), সিআরবি, চট্টগ্রাম, প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা-পূর্ব/সিআরবি, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় ব্যবস্থাপক, চট্টগ্রাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী/ ১/চট্টগ্রাম ও বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম, সহকারী নির্বাহী
প্রকৌশলী/কুমিল্লা, অফিসার ইনচার্জ, রেলওয়ে থানা চাঁদপুর, এসএসই/কার্য/চাঁদপুর ও কানুনগো লাকসাম কাছারীকে।
এ পত্রকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদ কমিটির বিরাট অংশের বিদ্রোহ হিসেবে ভেবে নিয়ে নিচতলায় মার্কেট নির্মাণ কাজে সাময়িক দমে যায়। কিন্তু প্রায় তিন বছর পর সম্প্রতি মার্কেট নির্মাণে আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে। তারা ধর্ণা দেয় ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এক প্রভাবশালী নেতার কাছে। তিনি সরল বিশ্বাসে মসজিদের স্বার্থে (?) তাঁর পক্ষ থেকে মার্কেট নির্মাণে অনুমোদন এনে দেয়ার আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসকে পুঁজি করেই তারা মার্কেটের বাকি কাজ সম্পন্ন ও দোকান বরাদ্দের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে এবং চারতলার কাজে হাত দিয়েছে বলে সচেতন মুসলি্লরা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
মসজিদ কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক/সদস্য সচিব আবুল হাসান লিটন বলেন, তিক্ত হলেও সত্য এই যে, নিচতলায় নামাজের ব্যবস্থা না থাকায় মসজিদ কমিটির সভাপতি অতি নিকটবর্তী বাসা থেকে এসে বার্ধক্যজনিত কারণে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়তে পারছেন না। এভাবে হাঁটু ও পায়ের ব্যথায় আক্রান্ত এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী সব বয়সী মানুষ, বিশেষ করে রোগী ও বয়োবৃদ্ধরা মসজিদের দোতলা তিনতলায় উঠে নামাজ আদায় করতে পারছে না। তারপরও মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে উক্ত মুসলি্লদের স্বার্থের বিপরীতে নিচতলায় মার্কেট ও চতুর্থ তলা নির্মাণের নূতন উদ্যোগ নিয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা দরকার।
বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে মসজিদ ভবন নির্মাণ ও সেজদাহের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ ধর্মীয়ভাবে কতোটা সিদ্ধ এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জস্থ হযরত মাদ্দাহ খাঁ (রঃ) জামে মসজিদের সাবেক খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি মোঃ আব্দুর রব আল কাদেরীর নিকট। তিনি লিখিতভাবে জানান যে, কুদুরী কিতাবে ওয়াক্ফ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে, যদি কেউ কোনো মসজিদ নির্মাণ করে তবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইহা হইতে প্রতিষ্ঠাকারীর মালিকানা দূরীভূত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে উক্ত মসজিদকে উহার রাস্তাসহ স্বীয় মালিকানা হতে পৃথক করতঃ লোকদেরকে উহাতে নামাজ পড়বার অনুমতি না দেয়। অর্থাৎ ওয়াক্ফ করে দিতে হবে।…..সঙ্গত কারণ ব্যতীত পূর্ব নির্ধারিত মসজিদ শহীদ করা বা ভেঙ্গে ফেলা বা মসজিদের চিহ্নিত জায়গায় দুনিয়াবি কোনো প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, দোকানপাট করা এমনকি মসজিদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে সেখানে ধর্মীয় কোনো প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা, খানকা ইত্যাদি নির্মাণ করা হারাম। যদি সঙ্গত কারণে মসজিদ স্থানান্তর বা বিলুপ্ত হয়, তবে পূর্ব মসজিদের স্থানকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে।…..যেহেতু কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে সেহেতু কোনো ব্যক্তির মালিকানাধীন সম্পত্তি ওয়াক্ফ বিহীন ও কোনো সরকারি সংস্থাধীন সম্পত্তিতে যে কোনো ছুরাতে ইজারা বা অস্থায়ী অনুমতি সাপেক্ষে জুমা মসজিদ নির্মাণ করা শরীয়তে মুহাম্মদী অনুযায়ী বৈধ হবে না। কারণ, সরকারি প্রয়োজনে যে কোনো সময় উচ্ছেদের সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যে মসজিদের স্থানকে সংরক্ষণ না করার কারণে মসজিদ নির্মাণকারীগণ কিয়ামত পর্যন্ত অভিসম্পাত পেতে থাকবে। উপরক্ত মসজিদ নির্মাণ বৈধ না হলেও নামাজও বৈধ হবে না। এছাড়া চাঁদপুরের অনেক মুফতি, হক্কানী আলেম ফতোয়া দিয়ে বলেছেন, যে মসজিদের নিচতলায় ২৮ বছর সিজদাহ হয়েছে, সে স্থানে মার্কেট নির্মাণ করা সম্পূর্ণ হারাম ও শরীয়তবিরোধী।
উপরোক্ত ইসলামী চিন্তাবিদদের বক্তব্যের আলোকে রেলওয়ের বিনা অনুমতিতে এবং অন্যের নামে লীজকৃত জায়গা জবরদখল করে বায়তুল আমিন রেলওয়ে জামে মসজিদ নির্মাণ ধর্মীয়ভাবে সিদ্ধ যে হয়নি তা খোলসা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও সিজদাহের জায়গায় মার্কেট নির্মাণের মতো গর্হিত কাজের উদ্যোগ যে একটি অবৈধতার ভিত্তির ওপর আরো জঘন্য অবৈধ কাজ করার সুস্পষ্ট আলামত এটি নিয়ে কারো যে কোনো দ্বিধা নেই অভিজ্ঞমহল সেটিই মনে করছেন। এমতাবস্থায় তারা রেল কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় সকল অনুমোদন নিয়ে উক্ত মসজিদের নামাজ বৈধ করার আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং চতুর্থ তলার কাজ বন্ধ রেখে বয়োবৃদ্ধ, রোগী, প্রতিবন্ধী, মাজুর মুসলি্লদের সুবিধার্থে মসজিদের নিচতলায় মার্কেট নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দ প্রদান বন্ধ করে নামাজ পড়ার ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে মসজিদ কর্তৃপক্ষের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন। সাথে সাথে রেল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় সকল মহলের সক্রিয় সাড়া প্রত্যাশা করছেন।
