মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ধারাবাহিক সুদহার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে নতুন বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে ঋণের সুদহার হবে ১২.৪৩ শতাংশ। তবে ভোক্তা ঋণের সুদহার পড়বে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘স্মার্ট’ বা সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এই হার জানিয়ে দিচ্ছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭.১০ শতাংশ। এরপরের মাস আগস্টে ৭.১৪ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৭.২০ শতাংশ। পরের মাস অক্টোবরে ৭.৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭.৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮.১৪ শতাংশ এবং সবশেষ জানুয়ারিতে স্মার্ট রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৬৮ শতাংশে।
ডলারের দর বাড়তে থাকার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে বলে শুরু থেকে জানিয়েছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
এদিকে সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, অর্থনীতিতে মুদ্রানীতিতে নেয়া উদ্যোগের প্রভাব পড়তে সময় লাগে।
এখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে না, আগের মাসগুলোর তুলনায় কিছুটা কমেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, এখন বিদেশি বিনিয়োগ, বিদেশি ঋণের প্রকল্পের অর্থছাড় ও বাণিজ্য অর্থায়নের ঋণ বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপও কমে আসবে। তাতে সামনে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩.৭৫ শতাংশ হারে সুদ যোগ করে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। অপরদিকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫.৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন যোগ করতে পারবে। সে হিসাবে, চলতি বছরের দ্বিতীয় মাসে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১২.৪৩ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংকগুলো। আগের মাসে ঋণে সর্বোচ্চ ১১.৮৯ শতাংশ সুদ নিতে পারতো।
ব্যাংকগুলোর জন্য শুধু ঋণে সর্বোচ্চ সীমা দেয়া হয়েছে। তবে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত সংগ্রহেও সুদহারের একটা সর্বোচ্চ সীমা দেয়া আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্মার্টের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫.৭৫ শতাংশ হারে সুদ যোগ করে ঋণের সুদ নিতে পারবে। আর স্মার্টের সঙ্গে ২.৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসে এসব প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ঋণের সুদহার হবে ১৪.৪৩ শতাংশ। অপরদিকে আমানতে সুদ দিতে পারবে ১১.৪৩ শতাংশ। এর আগের মাস জানুয়ারিতে ঋণের সুদ ছিল ১৩.৮৯ শতাংশ। একই মাসে আমানতে ১০.৮৯ শতাংশ সুদ দিতো প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংকটের সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যবসায়ীদের বাড়তি সুবিধা দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা আরোপ করে। এরপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতিবিদরা সীমা তুলে নিতে বলেছিল। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। এরপরেও দীর্ঘদিন এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সেই শর্তের কারণে সুদহার বাজারভিত্তিক করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য বলছে, সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৫৮ শতাংশ। নভেম্বরে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত প্রায় ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।