মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৫ উপলক্ষে চাঁদপুরে একাধিক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ১ অক্টোবর দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার আন্দবাজার, লালপুর মৎস্য বাজার, আমীরাবাদ ঘাট, চর উমেদ ও রাজরাজেশ্বর এলাকায় এ পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
এসময় তিনি বলেন, চাঁদপুরের নাম আজ ইলিশের জন্য সারা দেশে পরিচিত। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা হলে ভবিষ্যতে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকার আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ০৯ কার্তিক) পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার । এ আইন অমান্য করলে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা শুধু শাস্তির জন্য নয়, বরং আপনাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য। আজ যদি আমরা মা ইলিশ রক্ষা করি, আগামী দিনে নদীতে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে এবং উপকৃত হবেন আপনারাই। সরকার ও প্রশাসন এই সময়ে আপনাদের পাশে থাকবে। তাই আসুন, আমরা সকলে প্রতিজ্ঞা করি। এই ২২ দিন মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ পুলিশ পুলিশ সুপারসৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ২০২৫ সালের মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ঘোষণা করেছে। এই অভিযানের আওতায় আগামী ০৪ অক্টোবর হতে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন চাঁদপুরসহ নির্ধারিত অঞ্চলে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। যদি মা ইলিশকে এ সময়ে সংরক্ষণ করা যায়, তবে সারা বছর নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই সম্পদ ভোগ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আপনাদের অনুরোধ করছি—এই ২২ দিন ধৈর্য ধারণ করুন, মা ইলিশ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখুন এবং সরকার প্রদত্ত বিকল্প কর্মসংস্থান ও সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। কেউ যদি সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন , ইলিশ শুধু আমাদের জাতীয় মাছ নয়, এ মাছের উপর লাখো জেলের জীবিকা নির্ভরশীল। মা ইলিশ যদি প্রজনন মৌসুমে ধরা পড়ে, তবে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে। তাই সরকার যে ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা মানা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই আইন মানলে আগামীতে আরও বেশি ইলিশ ধরা সম্ভব হবে এবং আপনারাই এর সুফল ভোগ করবেন। মা ইলিশ রক্ষায় আপনারা সকলে সহযোগিতা করবেন—এই প্রত্যাশা করি।
কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের চীফ পেটি অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ড দিন-রাত নদীতে টহল দিচ্ছে। আমরা চাই আপনারা নিজেরাই সচেতন হয়ে এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলুন। মা ইলিশ রক্ষা করতে পারলে নদীতে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পাবে এবং আপনাদের জীবিকা আরও সুরক্ষিত হবে। যারা আইন অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে মা ইলিশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাপ্পি দত্ত রনি,নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহম্মেদসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মৎস্য দপ্তর ও কোস্টগার্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ।
পথসভাগুলোতে বক্তারা একযোগে মা ইলিশ সংরক্ষণে সকলকে সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এছাড়া ইলিশের টেকসই উৎপাদন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বস্তরের সহযোগিতা কামনা করা হয়।