প্রতিনিধি
চাঁদপুর, কুমিল্লা, দাউদকান্দি, লক্ষ্মীপুর, হাজীগঞ্জ, রায়পুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপকহারে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩৪ দিনে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার রোগি। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে প্রায় দেড়শ’ শিশু। এ সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণের চেয়েও বেশি।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) মতলব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এই কেন্দ্রে গত ১ ডিসেম্বর’ ১৬ থেকে গতকাল ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৪হাজার ৯শ’ ৯জন শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলা। এর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যাই বেশি। স্বাভাবিক সময়ে এখানে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হয় ৪৫-৫০ জন শিশু। গত বছর উলি্লখিত ৩৪ দিনে ভর্তি হয়েছিল ৩ হাজার ৭শ’ ৫১ জন শিশু। গতবারের তুলনায় এবার ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছে ৯১ জন শিশু। সূত্রটি আরও জানায়, গত ১ ডিসেম্বর’১৬ তে ১শ’ ৪৬জন, ২ ডিসেম্বর ১শ’ ৩১জন, ৩ ডিসেম্বর ১ শ’ ৩৩জন, ৪ ডিসেম্বর ১ শ’ ১৭জন, ৫ ডিসেম্বর- ১ শ’ ৩৭জন, ৬ ডিসেম্বর ১ শ’ ৩৯জন, ৭ ডিসেম্বর ১ শ’ ৩৩, ৮ ডিসেম্বর- ১ শ’ ৪২জন, ৯ ডিসেম্বর- ১ শ’ ৩৮জন, ১০ ডিসেম্বর ১ শ’ ১০জন, ১১ ডিসেম্বর ১ শ’ ৪৫জন,১২ ডিসেম্বর ১শ’ ৪৪জন, ১৩ ডিসেম্বর ১ শ’ ৩৩জন, ১৪ ডিসেম্বর- ১শ’ ৩৩জন, ১৫ ডিসেম্বর- ১শ’ ৫১জন, ১৬ ডিসেম্বর ১শ’ ৫৮জন, ১৭ ডিসেম্বর ১ শ’ ৫১জন, ১৮ ডিসেম্বর ১ শ’ ৪২জন, ১৯ ডিসেম্বর ১ শ’ ৪৮জন, ২০ ডিসেম্বর ১ শ’ ৭৫জন, ২১ ডিসেম্বর ১ শ’ ৫১জন, ২২ ডিসেম্বর ১ শ’ ৪৬জন, ২৩ ডিসেম্বর- ১ শ’ ৫২জন, ২৪ ডিসেম্বর ১ শ’ ৬৯জন, ২৫ ডিসেম্বর ১ শ’ ৬৪জন, ২৬ ডিসেম্বর ১ শ’ ৬০জন, ২৭ ডিসেম্বর ১ শ’ ৬২জন, ২৮ ডিসেম্বর ১ শ’ ৭৩জন, ২৯ ডিসেম্বর ১ শ’ ৭৫জন, ৩০ ডিসেম্বর ১ শ’ ৬৯জন, ৩১ ডিসেম্বর ১ শ’ ৯২জন, ১ জানুয়ারি ১ শ’ ৭০জন, ২ জানুয়ারি ১ শ’ ৮২জন গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৯১জন রোগি এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গতকাল আইসিডিডিআরবির মতলব শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার প্রতিটি ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ভিড়। তারা জানায়, প্রথমে রোগীর প্রাথমিক অবস্থা দেখার জন্য একটি কক্ষে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে রোগীর অবস্থা দেখে ভর্তি করানো হয়। কুমিল্লার কুটিরশর গ্রাম থেকে আসা ছয় মাস বয়সী শিশু আবিরের মা ফাতেমা বলেন, ‘মেয়েটি ঘন ঘন বমি ও পাতলা পায়খানা করার কারণে তাকে প্রাথমিকভাবে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার অবস্থা খারাপ দেখে আজ (গতকাল) সকালে তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। বর্তমানে স্যালাইন খেতে দেয়া হয়েছে। এখন সে আগের থেকে ভাল।’
আইসিডিডিআরবির যোগাযোগ শাখা জানিয়েছে, সধারণত বছরের অন্য সময় প্রতিদিন গড়ে ৫০ শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয় এই হাসপাতালে। ৭০ শয্যার হাসপাতালটিতে সংকটকালীন ১ শ’ ৭০ জন রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া যায়। তাদের সেই সরঞ্জাম ও লোকবল রয়েছে। বছরের এই সময়ে রোগি একটু বেশি থাকে।
আইসিডিডিআরবির মতলব শাখার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দ্রশেখর দাস বলেন, দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার গ্রহণই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। শীতে শিশুরা ব্যাপক হারে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত হওয়া ছয় মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খেতে দিতে হবে। সাত মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের খাবার স্যালাইন, বুকের দুধ ও প্রতিদিন একটি করে বেবি জিংক খাওয়ানো যেতে পারে। সঙ্গে খেতে দিতে হবে সুজি, খিচুড়ি, ডাব, চিড়ার পানি ও ভাতের মাড়সহ অন্যান্য খাবার। এই রোগ এড়াতে দূষিত পানি পান ও ময়লা খাবার বর্জনের উপদেশ দেন তিনি। পাশাপাশি শিশুদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন।