১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লা অঞ্চলের লাকসাম এলাকার প্রথম শহীদ উপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিকের কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর রত্নগর্ভা স্নেহময়ী মা হিরণ প্রভা রায় নন্দীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ২২ ডিসম্বর শুক্রবার সকালে জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যৌথ আয়োজনে এবং চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত প্রার্থনা সভা পরিচালনা করেন অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের অধ্যক্ষ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারী। প্রার্থনা সভায় উপস্থিত সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্বক মায়ের আত্মার শান্তি কামনায় সকলের আশীর্বাদ চাইতে গিয়ে সুজিত রায় নন্দী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। মায়ের স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় উপস্থিত অনেকেই এ পরিস্থিতিতে নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি। তাদের চোখে-মুখেও দেখা যায় শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর প্রিয়জনের ব্যথায় ব্যথিত হওয়ার মর্মবেদনা। আর এ মর্মবেদনা প্রকাশে তাদের দু-চোখ ভরে উঠে অশ্রুতে। মুহূর্তের মধ্যে প্রার্থনা সভায় শোক স্তব্ধতা নেমে আসে।
সুজিত রায় নন্দী বলেন, ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। আর বিজয়ের মাসে ১৩ ডিসেম্বর মাকে হারালাম। আমার মায়ের মৃত্যুতে চাঁদপুরবাসী তথা বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, সম্পাদকসহ রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেভাবে আমাকে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন তা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না। তাদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও মা আমাকে রাজনীতি করতে বাধা দেননি। মা আমাকে সব সময় বলতেন, জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করবি না। যদি মানুষের উপকার করতে নাও পারিস্, তোর দ্বারা যেন মানুষের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবি। মায়ের সেই কথাগুলো আমার সকল সময় মনে পড়ে। মা বলতেন, ভালো কাজের মধ্যে আনন্দ আছে। আমি মায়ের সেই কথাগুলো সকল সময় স্মরণ করি। চেষ্টা করি মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে। যদি কারো জন্যে কোনো ভালো কাজ করতে পারি তাহলে নিজে নিজে খুব আত্মতৃপ্তি পাই। আপনারা মায়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করবেন। আমি যেনো মায়ের আদেশ পালন করতে পারি, জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে চাঁদপুরবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে পারি সেজন্যেও আশীর্বাদ করবেন। তিনি তাঁর মায়ের জন্যে প্রার্থনা সভার আয়োজন করায় আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং আগামী ৩০ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে তাঁর মায়ের আত্মার মঙ্গলার্থে চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মান্দির, পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেঙ্, চাঁদপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে ভক্তদের জন্যে প্রসাদ গ্রহণ করার লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানান।
প্রার্থনা সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপনপূর্বক বক্তব্য রাখেন জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক রনজিত রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, জেলা জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি সন্তোষ চন্দ্র দাস, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সদস্য সচিব রাধা গোবিন্দ গোপ, সদস্য বিবি দাস, সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ-সভাপতি তপন সরকার, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, জেলা জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি গোপাল সাহা, যুগ্ম সম্পাদক বিবেক লাল মজুমদার, নির্মল রায়সহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ।