মতলব উত্তর: মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি ও উত্তর সর্দারকান্দি গ্রামবাসীর মধ্যে তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে ১জন নিহত । ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত ১জন আসামীকে পুলিশ আটক করে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত ওই আসামীকে জামিনে মুক্তি দেয়। মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শোক র্যালী বের করে। খুনিদের গ্রেফাতর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ২৭আগস্ট সকালে নয়াকান্দি গ্রামের সমির ও রাজিব উত্তর সর্দারকান্দি গ্রামের বাদামতলী বাজারে মোবাইলে টাকা লোড দেয়ার জন্য গেলে পাশ্ববর্তী জমিতে ধানের চারা রোপণ করা দেখে তারা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে। এ সময় উত্তর সর্দারকান্দি গ্রামের সহিদউল্লা, শাহজালাল, বোরহানসহ কয়েকজন তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। ওই দিন বিকেলে উত্তর সর্দারকান্দি গ্রামের ২/৩শ’ লোক সমবেত হয়ে নয়াকান্দি গ্রামে লাঠি, রড, সাবল দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা দেয়ার জন্য আসে। পথিমধ্যে নয়াকান্দি গ্রামের মোস্তফা গাজীর ছেলে দোকানদার শাহআলম(২৫) বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে দোকানে আসার পথে সর্দারকান্দির লোকজন তার উপর হামলা করে। হামলায় শাহ আলম গুরুত্বর আহত হয়। আহত শাহআলমকে প্রথমে মতলব দক্ষিণ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চাঁদপুর সদর হাপাতাল থেকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। মারামারির ঘটনায় শাহআলমের চাচা বাদি হয়ে ২৮ আগস্ট মতলব উত্তর থানায় মামলা করে। ওই মামলায় ও ঘটনার সাতে জড়িত নয়াকান্দি গ্রামের নূর হোসেন মিজির ছেলে মোঃ বোরহানকে আটক করে আদালতে পাঠায়। আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে মুক্তি দিয়ে দেয়।
শাহআলমের খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে এলাকাবাসীর শোকর্যালী
মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শাহআলমের বাড়িতে নারী-পুরুষ ভিড় করতে থাকে। ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে শাহআলমের লাশ নিজ গ্রামে নিয়ে আসলে লোকজনের কান্নায় এক হৃদয়বিধারক দৃশ্যে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। শাহআলমকে শেষ দেখা দেখার জন্য ভিড় করতে থাকে। স্থানীয় লোকজন শোক র্যালী বের করে। শোকর্যালীটি চরকালিয়া বাজার- আমিরাবাদ হয়ে রামদাসপুর নতুনবাজার হয়ে নয়াকান্দি এসে শেষ হয়। বাদ মাগরিব ফরাজীকান্দি ওয়েসিয়া কমপ্লেক্সে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।
নিহত শাহআলম ফরাজীকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে টংদোকানদার ছিলেন। শাহআলমরা ৪ভাই ও ৪ বোন। বড়ভাই সাইফুল ও ছোট ভাই পারভেজ ওরফে বাবু বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করে। সংসারের খরচ শাহআলম ওই টংদোকান করে চালাত। বাবা মোস্তফা গাজিও অসুস্থ, বোন খাদিজাকে বিয়ে দেয়া হয়ে। বাকি ৩ বোন রুমানা ৯ম শ্রেণীতে, তানিয়া ৭ম শ্রেণীতে, রুমা ৫ম শ্রেণীতে ও ছোট ভাই সাকিল ৮ম শ্রেণীতে লেখা পড়া করছে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
মতলব উত্তর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। শাহ আলমকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আইসিইউতে দেখে আসি। ঘটনান দিন বোরহানকে আটক করা হয়। পূর্বের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মামলার বাদী মুক্তার হোসেন বলেন, প্রথমে মারামারির ঘটনায় মামলা করা হয়েছিল। শাহ আলম মারা যাওয়ায় ওকে দাফন করে হত্যা মামলা করা হবে। খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন তিনি।