হাইমচরে ৬ষ্ঠ জাতীয় কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ক্যাম্প এ সাড়ে ৭ হাজার তাঁবু হবে প্রায় ১২শ’ বিদেশী অংশগ্রহণকারী চারশ’
বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের ‘অন্যতম আধার’ মেঘনা অববাহিকার কোল ঘেঁষে, মনোরম এক প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত সমতল ভূমি হাইমচরের ‘চরভাঙ্গা’ এলাকায় এবার অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ স্কাউটস্-এর উদ্যোগে ‘৬ষ্ঠ জাতীয় কমডেকা’ অর্থাৎ কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট ক্যাম্প। এবারের কমডেকার থীম হচ্ছে : ‘টেকসই সমাজ বিনির্মাণে স্কাউটিং’।
হাইমচর উপজেলার ৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের চরভাঙ্গা এলাকায় মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ে প্রায় ১শ’ ২০ একর সমতল ভূমি জুড়ে হতে যাচ্ছে কমডেকার আয়োজন। ছয়দিনব্যাপী এ কমডেকা শুরু হবে ৩১ মার্চ থেকে। শেষ হবে ৫ এপ্রিল। তবে অংশগ্রহণকারী সকলে ৩০ মার্চ কমডেকার মাঠে এসে উপস্থিত হয়ে রিপোর্ট করবেন। ৩১ মার্চ থেকে শুরু হলেও পহেলা এপ্রিল এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুর জেলা স্কাউটস্ অফিস সূত্রে জানা যায়, এ কমডেকায় মোট অংশগ্রহণকারী হবে ৭ হাজার ৪শ’। এর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেবে প্রায় চারশ’ জন। আর বাদবাকি ৭ হাজার হচ্ছে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার স্কাউট, রোভার স্কাউট সদস্য ও কর্মকর্তাগণ। এই ৭ হাজারের মধ্যে সবচে’ বেশি অংশ নেবে চাঁদপুর জেলা থেকে। এর সংখ্যা হচ্ছে মোট ৮শ’। এর মধ্যে স্কাউট ও রোভার স্কাউট সদস্য হচ্ছে সাড়ে ৭শ’ আর কর্মকর্তা হচ্ছেন ৫০ জন।
এই বিপুল সংখ্যক (সাড়ে ৭ হাজার) অংশগ্রহণকারীর আবাসনের জন্যে কমডেকা মাঠে তাঁবু টানানো হবে। প্রায় ১২শ’ তাঁবু তৈরি করা হবে বলে জানান এই কমডেকার আবাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ। গত ২১ মার্চ বুধবার সরজমিনে কমডেকার স্থান চরভাঙ্গা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মহাধুমধামে চলছে এর সার্বিক প্রস্তুতি কাজ। এদিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেলো, জনস্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন টয়লেট, বাথরুম ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ করছেন এবং আবাসনের দায়িত্বে থাকা লোকজন তাঁবু তৈরির কাজ করছেন। প্রথমে কথা হয় জনস্বাস্থ্য বিভাগের ক’জন কর্মকর্তার সাথে। তারা জানালেন, স্কাউটের জন্যে সিঙ্গেল টয়লেট করা হবে চারশ’টি। ছেলে-মেয়ের জন্যে পৃথক বাথরুম (গোসলখানা) থাকবে ১৮টি। প্রতিটি ১৩ ফুট লম্বা। আর বিদেশী অংশগ্রহণকারী মেহমান ও কর্মকর্তাদের জন্যে থাকবে ভিভিআইপি জোন। এঁদের জন্যে ২৬টি এটাস্ট বাথরুম টয়লেটসহ থাকবে। ৩৮টি শ্যালো টিউবওয়েল বসানো হবে। ৩৮টি মোটরের সাহায্যে পানি উত্তোলন করা হবে। আর রিজার্ভ করার জন্যে ১ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ৩৮টি পানির ট্যাংকি বসানো হবে। এসব পানি ধোয়া-মোছা, গোসলসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহারের জন্যে। আর খাবারের জন্যে পানির ব্যবস্থা করা হবে নদী থেকে। অর্থাৎ নদী থেকে পানি তুলে তা শোধন করে বিশুদ্ধ খাবার পানি হিসেবে প্রত্যেক তাঁবুতে সরবরাহ করা হবে। এই স্যানিটেশন সংক্রান্ত সকল কাজ ওইদিনই (বুধবার) ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এরপর কথা হয় কমডেকার আবাসন সাব-কমিটির সহকারী পরিচালক রাসেল আহমেদ, সুধীর চন্দ্র বর্মন ও মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে। তাঁরা জানালেন, এই কমডেকা মাঠে প্রায় ১২শ’ তাঁবু বসানো হবে। তখন দেখা গেলো মাঠের একটি অংশ জুড়ে তাঁবু বসানোর কাজ চলছে। বুধবার পর্যন্ত কয়েকশ’ তাঁবু বসানোর কাজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এই কমডেকা কেন্দ্রিক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে চরভাঙ্গায় মেঘনার তীর ঘেঁষে খোলা মাঠ জুড়ে।
কমডেকা বিষয়ে বাংলাদেশ স্কাউটের পরিপত্র থেকে জানা গেছে, কমডেকা হচ্ছে স্কাউট ও রোভার স্কাউটদের জীবনের অন্যতম আকর্ষণীয় ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, যেখানে অংশগ্রহণকারী স্কাউট ও রোভার স্কাউটবৃন্দ নিজেদের প্রশিক্ষণলব্ধ দক্ষতা প্রদর্শন, পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন ও স্থানীয় জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে সমাজ উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারে। অংশগ্রহণকারীদের কাছে এবারের কমডেকাকে আকর্ষণীয়, উপভোগ্য, আনন্দদায়ক ও স্মরণীয় করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষণীয়, বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং কমডেকা প্রোগ্রাম প্রণয়ন করা হয়েছে। এবারের কমডেকায় চ্যালেঞ্জসমূহ ‘লক্ষ্য’ এবং কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান সমূহ ‘উদ্যাপন’ নামে পরিচিত হবে।
