
চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা জেরিন আক্তারকে বিয়ে করে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে না ওঠানোর কারণে অভিমান করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় তিনজনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা জয়নাল গাজীর মেয়ে জেরিন আক্তারের সঙ্গে মেহেদী হাসান রিফাতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং পরে বিয়ে হয়।
এরপর মেহেদী হাসান রিফাতের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে জেরিন ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর থেকে শহরে আলাদা বাসায় বসবাস শুরু করেন। কিন্তু মেহেদী বিষয়টি তার পরিবারকে গোপন রাখেন এবং সংসার চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে মেহেদীর পরিবার বিষয়টি জেনে যায়। এ পরিস্থিতিতে মেহেদীর পরিবার জেরিনকে তাদের পুত্রবধূ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাকে চলে যেতে বলে। পরে স্থানীয় সালিসদের মধ্যস্থতায় দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয় এবং ২০২৫ সালের ৫ মে ৭ লাখ টাকা কাবিননামায় পুনরায় বিয়ে সম্পন্ন হয়। তবে সমঝোতা অনুযায়ী, জেরিনকে এক মাসের মধ্যে পুত্রবধূ হিসেবে ঘরে তোলার কথা ছিলো। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেহেদীর পরিবার টালবাহানা করতে থাকে। এ নিয়ে দু পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা ব্যর্থ হয়।
রোববার (১২ অক্টোবর ২০২৫) রাতে মেহেদীর পরিবার জেরিনকে হুমকি দেয় যে, তারা তাকে ঘরে তুলবে না এবং মেহেদী তাকে তালাক দেবে।
পরদিন সোমবার (১৩ অক্টোবর ২০২৫) সকালে জেরিন নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি লেখেন— তার মৃত্যুর জন্যে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি দায়ী। এরপর জেরিনকে তার রুমে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবার জানায়, জেরিন আত্মহত্যা করেছেন।
পরে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জেরিনের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর জেরিনের পিতা জয়নাল গাজী আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৬০, তারিখ : ১৪/১০/২০২৫ )।
এ ঘটনায় পুলিশ নিহত জেরিন আক্তারের স্বামী মেহেদী হাসান, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে।
এদিকে নিহত জেরিন আক্তারের পিতা জয়নাল গাজী বলেন, আমার মেয়ের মতো আর যেনো কোনো মেয়ের এমন অবস্থা না হয়। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
