মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মরনে মুক্তিসৌধ নির্মানের প্রেক্ষাপট ও ঘটনাবলী
আগামীকাল ৩এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল ও শংকর দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল ও শংকর স্মৃতি সংসদ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
তন্মধ্যে আজ সকাল ৭টা ৩০মিনিটে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় হতে শোক র্যালী শুরু হয়ে শপথ চত্বর, কালিবাড়ি মোড়, জে.এম. সেনগুপ্ত রোড, শহীদ জাভেদ সড়ক হয়ে শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল ও শংকর সড়কস্থ মুক্তিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পন, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ও আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন চাঁদপুর পৌরসভার পুনঃনির্বাচিত সফল মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধ সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডের কমন্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ওয়াদুদ ও চাঁদপুর সদর উপজেলা কমান্ডার
ঘটনাবলী ঃ
কালাম-খালেক-সুশীল ও শংকর বোমা তৈরী করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন এটা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু তাঁরা এ কঠিন কাজে হাত দিয়েছেন কেন? বোমা তৈরীর কাজে উৎসাহিত হলেন কিভাবে? আজকের প্রজন্মতো বিষয়টি অবহিত নন। সেজন্যে পেছনের ইতিহাসের অবতারণা করলাম সংক্ষেপে।
বাংলাদেশ বাঙ্গালিদের অহংকার। ২শ’ বছর ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্যে সিপাহী বিপ্লব, ফকির সন্নাস বিদ্রোহ, নীলকরদের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহ, বৃটিশদের অস্ত্রাগার লুন্ঠনসহ বহু দুঃসাহসী অভিযান চালিয়েছেন আমাদের পূর্ব পুরুষ বাঙ্গালিরা। বিদেশী শাসকদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্যে আত্মাহুতি দিয়ে গেছেন সূর্যসেন, তীতুমীর, ক্ষুদিরামসহ অনেক বীর সন্তান।
অবশেষে ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র। ব্রিটিশরা সেদিন হাজার মাইল দুরের বাংলাদেশকে জুড়িয়ে দিয়ে অবাঙ্গালি পাঞ্জাবীর দেশ পশ্চিম পাকিস্তানকে নিয়ে গঠন করে পাকিস্তান। বাংলাদেশের নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাঙ্গালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রায় জোর করেই সংখ্যালঘু পাঞ্জাবীরা দীর্ঘ ২৩ বছর উপনিবেশ দেশ হিসেবে শাসন ও শোষণ করেছিলো বাঙ্গালিদের দেশ পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে।
বীর বাঙ্গালিরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন, একের পর এক রক্ত ঝরানো গণ আন্দোলন থেকে সৃষ্টি করলো গণঅভ্যুত্থান ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত। শাসকরা বাধ্য হলো ১৯৭০ সালের নভেম্বরে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন ঘোষণার। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলো বাংলার মানুষ। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানী চক্র নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় শুরু না করে শুরু করলো চক্রান্ত। গোপনে গোপনে বাংলাদেশে নিয়ে এলো সামরিক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ আর হিংস্ত্র পাকিস্তানী সৈন্যদের।
বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা ও বৈঠকের নামে জেনারেল ইয়াহিয়ার ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরে ৭মার্চ’৭১ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পরিস্কার ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫মার্চ রাতের আঁধারে পাকিস্তানী র্ববর সৈন্যরা হিং¯্র পশুর মতো রাজধানী ঢাকার বুকে ট্যাংক-কামান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। হত্যা করলো হাজার হাজার নিরীহ জনতা। গ্রেফতার করলো বঙ্গবন্ধুকে। ২৬মার্চ শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার সৈনিক, বিডিআর, পুলিশ, কৃষক, ছাত্র, শ্রমিক, যুবকসহ বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো বাংলার স্বাধীনতার জন্য।
তখন চাঁদপুরের জনতাও থেমে থাকেনি। বসে নেই বাম দল নামে পরিচিত ন্যাপ ও ছাত্র ইউনিয়ন। তখন কমিউনিস্ট পার্টি ছিল নিষিদ্ধ। তাদের কাজ চলছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মাহবুবুল হক পাটওয়ারী, ফজলুল হক সরকার, মাওলানা আঃ লতিফ, ফজলুর রহমান, মোস্তফা রুহুল আনোয়ার, আবুল বাসার দুলাল, ন্যাপ নেতা জীবন কানাই চক্রবর্তী, খাজা ভাই, বি.বি. দাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ চাঁদপুর কলেজের অধ্যাপক আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্বে বৈঠক করলেন কয়েক দফা, মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার প্রস্তুতি হিসেবে কি করা যায়।
অবশেষে নিরোধবরণ অধিকারী (প্রাক্তন সিপিবি জেলা সভাপতি) বোমা তৈরির জন্যে খুঁজে বের করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মৈশাদী গ্রামের দ্বিজেন্দ্র নারায়ান চক্রবর্তীকে। পাক-হানাদারদের প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে সকলে একমত হয়ে বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করার জন্যে নেমে পড়লেন। চাঁদপুর কলেজ, মাতৃপিঠ এবং ফিসারি ল্যাবরেটরী ভেঙ্গে সংগ্রহ করা হলো রাসায়নিক দ্রব্যাদি। বোমা তৈরি আরো সরাঞ্জামাদির প্রয়োজনে তৎকালিন আওয়ামীলীগ নেতা পুরাণবাজারের রফিক উদ্দিন আখন্দ ওরফে সোনা আখন্দকে বুঝানো হলো বোমা তৈরির প্রক্রিয়া ও গুরুত্ব সম্পর্কে। তাঁর ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় পুরাণবাজার ও ডাব্লিউ রহমান জুট মিল থেকে সংগ্রহ করা হলো বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় সামগ্রী। গুয়াখোলাস্থ পন্ডিতপাড়ার আবুল বাসার দুলালের বাড়িতে বোমা তৈরির রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও সরঞ্জামাদি রাখার ব্যবস্থা করা হলো।
২৯মার্চ ৭১ বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হলো। কিন্তু এখানে এ কাজ নিরাপদ নয় মনে করে স্থানান্তর করা হলো ট্রাক রোডস্থ পোদ্দার বাড়িতে অর্থাৎ বর্তমান নির্মিত ‘মুক্তসৌধে’র স্থানটিতে। দ্বিজেন্দ্র নারায়য়ণ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা চাঁদপুর কলেজের বিএসসি পরীক্ষার্থী মেধাবী ছাত্র আবুল কালাম ভূঁইয়া, আনোয়ার হোসেন আরিফ সহ কয়েকজন সাহসী ছাত্র বোমা তৈরির কাজে লেগে গেলেন। বেশ ক’টি বোমা তৈরি হলো। ঠিক করা হলো বৃহৎ একটি বোমা ৩ এপ্রিল রাতে পরীক্ষামূলকভাবে বিস্ফোরন করা হবে। সে সুযোগ আর হলো না। ৩ এপ্রিল আনুমানিক বিকেল ৪টায় বোমাগুলো সাজিয়ে রাখতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে যায় এবং তা’ বিস্ফোরিত হয়ে বিকট আওয়াজে চাঁদপুরের জনতাকে স্তব্ধ করে দেয়। উড়ে গেলো তৈরি করা টিনের ঘরটি। শহীদ হলেন কালাম, খালেক, সুশীল ও শংকর। আহত হলেন দ্বিজেন্দ্র নারায়ন চক্রবর্তী ও আনোয়ার হোসেন আরিফ।
মুক্তিসৌধ নির্মানের প্রেক্ষাপট ঃ
১৯৭২সন থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি বৃহৎ অথবা ক্ষদ্র পরিসরে কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর উদযাপন পরিষদের নামে পালিত হতো। স্বাধীনতার ২৬ বছর পর ১৯৯৭ সালে দিবসটি পালনের কর্মসূচি ছিলো ভিন্নতর। শাহাবুদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও অ্যাড. বদিউজ্জামান কিরণকে সাধারন সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিলো কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর শহীদ স্মৃতি সংসদ। আর এ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ খালিদ আনোয়ারকে প্রধান অতিথি করে দিবসটি পালনের জন্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিলো। জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন এ কর্মসূচিতে। সেদিন প্রধান অতিথি কর্তৃক স্মৃতিসৌধের ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ নির্মানের দ্বারা উন্মোচিত হয়েছিল। অনেকের ধারনা হয়েছিলো এবার সরকারি ভাবেই চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মনরনে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হবে। দূর্ভাগ্য এ উদ্যোগ বিন্দুমাত্র অগ্রসর হয়নি।
২০০২সালে চাঁদপুর প্রেসকাবের সভাপতি, দৈনিক চাঁদপুর সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাড. ইকবাল-বিন-বাশার মহান মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর স্মরনে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণে চাঁদপুর প্রেসকাব থেকে উদ্যোগ নেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তাঁর ঘোষণায় বলেছিলেন, স্বাধীনতার ৩০বছর পেরিয়ে গেলেও আজো চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মৃতিসৌধ নির্মিত হচ্ছে না, অবমাননায় আমরা শুধু কলঙ্কিত নই, বাঙ্গালি জাতি হিসেবে তাদের আত্মার কাছে আমরা পরাজয় বরণ করেছি। যথাযথ উদ্যোগ ছিলে না বলেই আজ ট্রাক রোডের সে পোদ্দার বাড়ির শহীদদের স্মৃতি স্থান অবহেলিত। তিনি ৩১তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে জাতির বিবেক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে চাঁদপুর প্রেসকাবের উদ্যোগে খুব দ্রুত নিউ ট্রাক রোডস্থ পোদ্দার বাড়ির সম্মুখে অবহেলিত স্থানে শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর স্মরনে স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হবে মর্মে আহ্বায়ক কমিটি গঠন এবং স্মৃতিসৌধ নির্মানে প্রয়োজনীয় সকল কাজ করার প্রস্তাব রাখেন।
কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর শহীদ স্মৃতি সংসদ চাঁদপুর প্রেসকাবের এ মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক শহীদ পাটোয়ারী, ব্যাংকার মজিবুর রহমান, অধ্যাপক দুলাল দাস, জাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া সহ আমরা স্মৃতিসৌধ নির্মানের একটা ডিজাইন তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে একজন আর্কিটেক্ট খুঁজতে শুরু করি।
বিষয়টির অর্থ যোগান সংক্রান্তে আমি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০০২ এর চেয়ারম্যান অ্যাড. বিণয় ভূষন মজুমদারের সঙ্গে বিজয় মেলার উদ্বৃত্ত টাকা চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ নির্মানের কাজে ব্যয় করা যায় কিনা আলাপকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মহাসচিব অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিমের পরামর্শ নিতে বলেন। অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি বিবেচনায় আনেন। পরদিন বিজয় মেলার হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত সভায় বিজয় মেলার উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের প্রথম শহীদদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ নির্মানের প্রস্তাব করলে উপস্থিত সকলে একমত পোষন করে প্রায়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম ও অ্যাড. বিণয় ভূষন মজুমদারকে অনুরোধ জানান।
স্মৃতিসৌধের ডিজাইন তৈরির জন্যে প্রথমে জনতে পারলাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তীর এক সুযোগ্য পুত্র বিপ্লব চক্রবর্তী রাশিয়া থেকে আর্কিটেক্ট হিসেবে ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত আছে। আমরা জীবন কানাই চক্রবর্তীর সাথে দেখা করে তাঁর পুত্রকে চাঁদপুরে এনে একটা ডিজাইন তৈরির অনুরোধ জানালে তিনি তাঁর পুত্রকে দিয়ে একটা ডিজাইন তৈরির ব্যবস্থা নেন।
ইতিমধ্যে অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম ও অ্যাড. বিণয় ভূষন মজুমদার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রব হাওলাদারকে স্মৃতিসৌধ নির্মানের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হন। জেলা প্রশাসক মহোদয় স্থানটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা আহ্বান করে স্মৃতিসৌধ নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সভায় জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক এবং সলিম উল্যাহ সেলিমকে সদস্য সচিব করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ সকল স্তরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি শক্তিশালী নির্মাণ কমিটি গঠন করেন। এ নির্মাণে কমিটি স্মৃতিসৌধের নামকরণ করেন মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর সহ সকল শহীদ স্মরনে ‘মুক্তিসৌধ’। অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম জানালেন আমাদের নিজেদের মধ্যে আর একজন আর্কিটেক্ট আছে, তিনি হলেন চাঁদপুরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষানুরাগী সফিউদ্দিন আহমদের সুযোগ্য পুত্র লুৎফুল্যাহিল মজিদ (রিয়াজ) বুয়েট স্থাপত্য বিভাগে চুড়ান্ত পর্বে অধ্যায়নরত। মুক্তিসৌধ নির্মাণ কমিটির সভায় একটি ডিজাইন করার জন্য প্রস্তাব হলে জেলা প্রশাসক মহোদয় জানতে চান চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের উপর ডিজাইন তৈরি করার মতো আর্কিটেক্ট আর কারা আছেন? তাদের দিয়ে ডিজাইন তৈরি করে আনার প্রস্তাব করেন এবং পরবর্তী সভায় ডিজাইন চুড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তরুণ আর্কিটেক্ট লৎফল্যাহিল মজিদ (রিয়াজ) ও বিপ্লব চক্রবর্তী দাখিলকৃত ডিজাইনের মধ্যে উভয়টির ডিজাইন ভালো হয়েছে। মুক্তিসৌধ নির্মাণ কমিটি লৎফল্যাহিল মজিদ (রিয়াজ) এর ডিজাইন অনুমোদন করেন এবং মুক্তিসৌধ নির্মাণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
মুক্তিসৌধ নির্মাণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০০২ ও ২০০৩ এর উদ্বৃত্ত টাকা, চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের তহবিলের টাকা, মাননীয় সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক অনুদানের টাকা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক অর্থাৎ চাঁদপুরের সকল স্তরের সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গের সার্বিক সহযোগিতায় প্রায় ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘মুক্তিসৌধ’ নির্মান কাজ সমাপ্ত করা হয়।
প্রাক্তন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুর রব হাওলাদার ‘মুক্তিসৌধ’র পূর্ণাঙ্গ কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। পরবর্তি জেলা প্রশাসক মোঃ তাহেরুল ইসলাম শেষ কাজটুকু সমাপ্ত করেছেন। তবে প্রাক্তন জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুর রব হাওলাদার চাঁদপুরে তার সর্বশেষ কর্মময় জীবনে ২০০৪ সালে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর সহ সকল শহীদ স্মরনে নির্মিত ‘মক্তিসৌধে’ সর্বপ্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মোঃ তাহেরুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুক্তিসৌধে’ মাহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছেন। বর্তমানে অঙ্গীকারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পরপরই মুক্তিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ অব্যাহত আছে।
‘মুক্তিসৌধ’ নির্মাণের স্থানটিতে ২ শতাংশ ভূমি কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর এ চার শহীদদের নামে বরাদ্দ রয়েছে। মুক্তিসৌধের উত্তর পাশে সরকারের প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমি রয়েছে। এ স্থানটি ‘মুক্তিসৌধ’র নামে বরাদ্দ ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসক মহোদয়সহ চাঁদপুরের সুধীজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক পরিচিতি ঃ
সাধারণ সম্পাদক, শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল-শংকর স্মৃতি সংসদ, চাঁদপুর।