চাঁদপুর নিউজ :নি:সঙ্গতা, বিষন্নতা আর বুক ভরা কষ্ট নিয়ে এক বির্বণ জীবনের ঘানি টানছেন চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা দিপালী চক্রবর্তী।
মুক্তিযু্দ্ধে যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ, তাদেরই একজন চাঁদপুর সদর উপজেলার সিলন্দিয়া গ্রামের চক্রবর্তী বাড়ির সচীন্দ্র চক্রবর্তীর মেয়ে দিপালী চক্রবর্তী।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পেরিয়ে গেলেও দিপালী পাননি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি।
১৯৭১ সাল। যখন বিষাক্ত সর্পের দৌরাত্ম্যে থর থর করে কাঁপছে পুরো দেশ। আর তখন এদেশের কিছু নরপিশাচ হায়নার কাঁধে চড়ে পাকবাহিনী অত্যাচার, ধর্ষণ, খুন আর ধ্বংসলীলায় মত্ত।
যুদ্ধের ছোট বড় কতো কাহিনী উঠে এসেছে বর্তমান প্রজন্মের সামনে।
আবার কতো গল্প রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। তেমনিই আড়ালে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা দিপালী চক্রবর্তীর জীবন কাহিনী।
১৯৭১ সালের সেই তারুণ্যদ্বীপ্ত লাবন্যময়ী দিপালী আজ বয়সের ভারে ন্যুজ্ব প্রায়। জীবনের প্রায় ৬০ বসন্ত পার করেছেন সঙ্গীবিহীন। বিয়ে করেননি তিনি। এনিয়ে কোনো দুtখও নেই দিপালীর।
দিপালী যুদ্ধে তার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের কাহিনী কাউকে বলতে চাননা। কখনো কখনো রাগ হলে, মুখ ফসকে কঠিন দু’একটি সত্য বের হয়ে আসে। আবার কি যেন ভেবে থেমে যান দিপালী।
দিপালী চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি কিছু জানতে চাই না, কাউকে কিছু বলতেও চাই না। বলেই বা কী লাভ?’
দিপালীর বাবা সচিন্দ্র চক্রবর্তী ছিলেন শহরতলী বাবুর হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দু’বোনের এক ভাই মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী। দিপালী সবার ছোট। বড় ভাই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ভাইয়ের দুই ছেলে টিউশনি করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছেন। তাদের টানাটানির সংসারেই চলে তার খাওয়া দাওয়া। আর জরাজীর্ণ ঘরের বারান্দায় কাটে রাত।
দিপালীর বৌদি রেখা চক্রবর্তী জানান, ‘ননদেরতো কেউ নেই আমরা ছাড়া? তাই কষ্ট হলেও পরিবারের সদস্য হিসেবে তার ভরণপোষণ চালিয়ে যাচ্ছি।’
দিপালীর বড় ভাইয়ের ছেলে হারাধন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার পিশি (ফুফু) মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তার স্বীকৃতি আজো মেলেনি। আর এটা এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় যে কাউকে মুখ ফুটে এসব কথা বলাও যায় না।’
স্থানীয় মো. খোকন খান জানান, দিপালী মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত হয়েছেন।
খায়রুল ইসলাম নয়ন ও শাহজাহান খাঁ বলেন, ‘ওসব বিষয় মিডিয়ায় তুলে ধরলে আসলে কোনো লাভ হবে কী? এসব বিষয়ে কথা বলা মানে নিজেকে আবার ধর্ষণ করা। তাই ওসব বিষয়ে দিপালী কিছু বলতে চান না।’
তারা বলেন, ‘আজো তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। তার মানবেতর জীবনযাপনই বলে দেয় যে তিনি কোনো জায়গা থেকেই কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননি।’
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দিপালী যাতে সরকারি সহায়তা ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান এ দাবি স্থানীয় লোকজনের।