গোলাম কিবরিয়া জীবন:
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টর কমান্ডার চাঁদপুরের কৃতি সন্তান লে. কর্ণেল (অবঃ) মোঃ আবু ওসমান চৌধুরী। তিনি ১৯৩৫ সালের পহেলা জানুয়ারি এ জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুল আজিজ চৌধুরী, মাতা মাজেদা বেগম। তার স্ত্রী মরহুমা নাজিয়া ওসমান। জনাব ওসমান চৌধুরীর পিতামহ ছিলেন জমিদার মিয়া রাজা হাজী। তিনি ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ পাশ করেন। ১৯৫৮ সালের ২ জানুয়ারি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৫৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর কমিশন প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুলাই তিনি সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীতে তিনি থাকা অবস্থায় সহপরিচালক পে এন্ড পেনশান (মেজর) সহকারী পরিচালক সরবরাহ ও যান (লে. কর্নেল) এবং পরিচালক সরবরাহ ও যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আবু ওসমান চৌধুরী অন্যতম সংগঠক ও দক্ষিণ পশ্চিম রণাঙ্গনে ৮নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে (বৃহত্তর কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা) দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে বিশ্বের ৩৯টি দেশের শতাধিক সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার বর্তমান মেহেরপুর জেলার অন্তর্গত বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলার জনগণের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ প্রকাশ্যে স্বাধীন বাংলার মাটিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উক্ত জনপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি তার যুদ্ধক্লান্ত এক প্লার্টুন ইপিআর সৈন্য দ্বারা মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। যুদ্ধক্লান্ত ওই অনুষ্ঠানে তারই স্ত্রী নাজিয়া ওসমান সারা বাংলার একমাত্র নারী হিসেবে উপস্থিত থেকে নারী জাতির প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু এখানে সবচেয়ে দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার গুলশানস্থ বাসায় ঢুকে কিছু বিপদগামী সৈন্য লে. কর্নেল ওসমান চৌধুরীকে না পেয়ে তার স্ত্রী নাজিয়া ওসমানকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাক বাহিনীর ২৭ বেলচু রেজিমেন্টকে আক্রমণে নিশ্চিহ্ন করে কুষ্টিয়া জেলাকে শত্রু মুক্ত করেন। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যান পদে ৪ বছর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বহু সামাজিক, শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সাথে তিনি চাঁদপুরের জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর ২০১১ সাল থেকে দায়িত্ব পালনরত আছেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এর একজন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। তার লেখা ১৯৭৪ এর স্বাধীনতা থেকে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা উত্তরণের ধারাবাহিক ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বইটি ১৯৯৩ সালে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ কর্তৃক পুরস্কৃত হয়। একই সালে আলাওল সাহিত্য পুরষ্কারও লাভ করে। তার তত্ত্বাবধানে ‘এক নজরে ফরিদগঞ্জ’ নামক গ্রন্থটিও তথ্য বহুল। তিনি ‘সময়ের অভিব্যক্তি’ একটি বই সংকলন করেন। এই বইটি ১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট প্রকাশিত হয়। ‘সোনালী ভোরের প্রত্যাশা’ এবং ‘শতাব্দীর মহানায়ক’ নামক দুটি বইও প্রকাশ করেন। তার জীবনী নিয়ে সাংবাদিক ও শিল্প সমালোচক রফিকুল ইসলাম “ঐব ঋড়ঁমযঃ ভড়ৎ ঃযব সধঃযবৎষধহফ” নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য প্রামান্যচিত্র তৈরি করেন। এই প্রামান্যচিত্রটি অস্লো থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেছে। তিনি তাঁর জন্মস্থান ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরও শহীদ নিরস্ত্র ব্যক্তিদের নাম সম্মিলিত একটি আকষর্ণীয় শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করেন।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।