মতলব প্রতিনিধি:বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির মিষ্টি, হাতিয়ার মহিষের দই কমবেশি সব অঞ্চলের মানুষের কাছেই প্রিয়। সুমিষ্ট খাবার। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে এসব মিষ্টি কিংবা দই নিয়ে গেলে সবাই খুশি হন। এমনই একটি বিখ্যাত খাবার ক্ষীর। চাঁদপুরের মতলবে এটি তৈরি হয়। এ ক্ষীরের সুনাম শত বছরের। আজও আছে। প্রসিদ্ধ এ ক্ষীর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তথা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করা হতো, এখনও হচ্ছে। এর চাহিদা অনেক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা মতলব বাজারে এনে দুধ বিক্রি করতেন। ওই সময় মতলবের ঘোষপাড়া ছিল ক্ষীর, দধি ও ঘি তৈরির আস্তানা। সে সুবাদে কয়েকটি ঘোষ পরিবারের সদস্য অল্প দামে দুধ কিনে উন্নতমানের ক্ষীর তৈরি করতেন। ওই সময় থেকেই মতলবের ক্ষীর তৈরির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষ বেশি গরু পালতেন। আর দুধ বিক্রি করতেন মতলব বাজারে। কথা হয় একসময়ের প্রসিদ্ধ ক্ষীর ব্যবসায়ী প্রয়াত গান্ধীচরণ ঘোষের ছেলে কিশোর কুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি বলেন, মতলব হচ্ছে ক্ষীরের জন্য বিখ্যাত। আজ থেকে ৬০-৭০ বছর আগে মণে মণে ক্ষীর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করতেন আমার প্রয়াত পিতা গান্ধীচরণ ঘোষ। বিশেষ করে দেশের বাইরেও মতলবের ক্ষীরের চাহিদা ছিল বেশি। এখনও এর চাহিদা অব্যাহত আছে। আমাদের এ পেশাটি এখনও ধরে রেখেছি। অগে দুধের দামও কম ছিল, আমরা ভাল ক্ষীর তৈরি করতে পারতাম। এখন সবকিছুর দামই বেড়ে যাচ্ছে। তখন আমার কাকা বেনু ঘোষ, হরিপদ ঘোষ ও প্রভাত ঘোষসহ অনেকে ক্ষীর বিক্রি করতেন। এখন তো ভাল ক্ষীরের কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। দুধের কেজিও ৬০-৭০ টাকা। আগের মতো ব্যবসায়ীরাও বাজারে দুধ নিয়ে আসেন না। এলেও ভাল দুধ পাওয়া যায় না। যার ফলে আমাদেরও বেশি দামে দুধ কিনে ক্ষীর, মিষ্টি তৈরি করতে হচ্ছে।
এ ছাড়া বর্তমানে তেমন গাভীর দুধ না পাওয়ায় এবং ক্ষীর তৈরির অন্য দ্রব্যসামগ্রী সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষীরের দাম তুলনামূলক একটু বেশি।
মতলবের ঘোষপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষীর ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষীর তৈরির কাজে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ক্ষীর ব্যবসায়ী মিলন চন্দ্র ঘোষ জানান, ক্ষীর মতলবের জন্য বিখ্যাত। এখন আর প্রকৃত ক্ষীর ইচ্ছা করলেই তৈরি করতে পারি না। কারণ বাজারে দুধের দাম বেশি এবং চাহিদানুযায়ী দুধও পাওয়া যায় না। তার পরও আমার পূর্বপুরুষ বাপ-চাচারা এ ব্যবসা করে আসছেন, আমরাও করছি। কয়েক ক্ষীর ক্রেতা জানান, মতলব ক্ষীরের জন্য বিখ্যাত। আগে প্রকৃত ক্ষীর কিনতে পারতাম। এখন বেশি মূল্য দিয়েও প্রকৃত ক্ষীর পাওয়া দুর্লভ। এদিকে এখনও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ক্ষীর কিনছেন। দুধের মূল্য কম হলেই স্বল্প দামে প্রকৃত ক্ষীর পাওয়া যায়। এ প্রসিদ্ধ খাবারটি সবার পছন্দনীয় হলেও হতদরিদ্র মানুষরা অর্থের জন্য তা কিনে খেতে পারছেন না।