শেখ ওমর ফারুক:
মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম এর বিরুদ্ধে গত কয়েক মাস আগে বেনামী পত্র দিয়ে ডজন খানেক ভূয়া অভিযোগপত্র শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগীয় দপ্তর ও কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে তা তদন্ত শেষে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
স্থানীয় শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, আক্তার হোসেন, দু’বার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মনিরুল হক একবার, উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ছাইফুল আলম একবার ঐ একই অভিযোগের সরেজমিনে তদন্ত করেন। সবচে’ মজার ব্যাপার হলো অভিযোগ একই কিন্তু অভিযোগকারি ভিন্ন এবং তাদের নাম ঠিকানার সাথে বাস্তবে কোন মিল নেই। এমনকি মতলব উত্তরে ঐ নামে কোন ব্যক্তিও নেই। অথচ চার চারবার ঐসব ভূয়া অভিযোগের তদন্ত্মকার্য সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাজেশন, মার্কসীট, বিভিন্ন ফরমেটের ফরম বিক্রি ও শিক্ষক সংস্করণ বিতরণে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ছিল। এ ব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষকদের নিকট মুঠোফোনে ও প্রত্যক্ষ কথা বলে জানা যায়, সাজেশন বই একজন অবসরপ্রাপ্ত এটিইও ফেরি করে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বিক্রি করেছেন। তাছাড়া ৬ হাজার ১শ’ ৯৫টি সাজেশন বই বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ যে প্রেস থেকে সাজেশন বই ছাপানো হয়েছিল সেই সিরাজ অপসেট প্রিন্টিং প্রেস এর মালিক মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি সর্বসাকুল্যে ৩ হাজার ৫শ’ সাজেশন বই ছাপিয়েছেন যা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করেছেন ঐ অবসরপ্রাপ্ত এটিইও।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ডিআর ভুক্ত শিক্ষার্থী ছিল ৫ হাজার ৭শ’ ৯৫ জন; তন্মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৫ হাজার ৩শ’ ৭৯ জন এবং পরীক্ষায় ৩৫ জন অনুত্তীর্ণ হয়। অথচ অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে ৬ হাজার ৬শ’ মার্কসীট বিক্রি করে ৬৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ঐ এটিইও রবিউল। শিক্ষকবৃন্দ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নিকট লিখিতভাবে জনান যে, বিভিন্ন ফরমেটের ফরম তাঁরা ফটোকপির দোকান হতে ফটোকপি করে নিয়েছেন এবং শিক্ষক সংস্করণ বিতরণের সময় ঐ এটিইও উপস্থিত ছিলেন না। ৪৮ নং হানিরপাড় সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার বলেন, তিনি তাঁর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটিও সাজেশন বই কিনতে দেখেননি। তাঁকে চাঁদপুর থেকে শিক্ষক সংস্করণগুলো আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মাত্র। উক্ত অভিযোগ সম্পর্কে ৫৯ নং পাঁচানী সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক আহমেদ আল কামাল বলেন, কতিপয় দুষ্ট লোক এ ধরণের মিথ্যা-বানোয়াট-ভূয়া বেনামী অভিযোগ করে শুধু হয়রানি করার উদ্দেশ্য। তিনি আরো বলেন, গুণগত ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য উনার মতো অফিসারের বিকল্প নেই। তাঁর নতুন নতুন আইডিয়া দেওয়ার ক্ষমতা আছে। ৬৫ নং এখলাছপুর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মোঃ আনিছুর রহমান ও ৯৮ নং আমিনপুর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক নজির আহমেদ, ৪৭ নং নিশ্চিন্তপুর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক খোদেজা বেগম, ১৩১ নং ইন্দুরিয়া সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মোঃ নূরে আলম সিদ্দিকী, ১৮৪ নং ঠেটালিয়া নোয়াবপুর সপ্রাবির সহকারি শিক্ষক মোঃ আঃ হান্নান, বলেন যে, বিগত দিনে যারা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আগমন ও প্রস্থান করতে অক্ষম ছিল তারা বেনামী পত্র দিয়ে অফিসারদের হয়রানি করছেন। সুতরাং ভবিষ্যতে বেনামী ও ভূয়া অভিযোগ আমলে না নেওয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তাঁরা।
৮৩ নং বেগমপুর সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা আক্তার লাভলী বলেন, তিনি অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, নির্ভীক, কর্মপটু, পারদর্শী অফিসার কিন্তু বিদ্যালয়ে আগমন- প্রস্থানে অনিয়ম করলে তিনি রেগে যান। তবে নিয়মমাফিক বিদ্যালয় পরিচালনা করলে তিনি খুব খুশি হন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তাঁর নিকট যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে তদন্ত্মকারি কর্মকর্তা তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগ মিথ্যা ও ভূয়া প্রতিপন্ন হয়েছে। সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মনিরুল হক বলেন, তাঁর কাছে যে অভিযোগের তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অভিযোগকারী হিসেবে ৮৮ নং রাঢ়ীকান্দি সপ্রাবির সহ. শিক্ষক এস, এম শাহ আলমের নাম দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি নিজেই বলেছেন যে, তিনি অভিযোগ করেননি এবং এমনকি তিনি ঐ অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ছাইফুল আলম বলেন, অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এ ধরণের বেনামী অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য মোঃ শহীদুল্যাহ মাস্টারের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, কাজকর্মে তিনি দক্ষ ও মনোযোগী এবং উপজেলায় শিক্ষার গুণগত মানোয়ন্ননের জন্য তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।