* নি¤œমানের ইট, খোয়া, সামগ্রী ব্যবহার * নির্ধারিত উপেক্ষা করে পুকুর চুরি * প্লাট ফর্মের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অনিয়ম * গাইডওয়াল আড়াই ফুটের পরিবর্তে ২০ ইঞ্চি * নতুন ভবনে ফাটল
চাঁদপুর-লাকসামের পুরনো রেলপথ নুতন রূপে আধুনিকায়ন করার জন্য সরকার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছে। পি ডব্লিউ লুক লাইন ও আই ডব্লিউ রেলওয়ে ভবন ও প্লাটফর্মের কাজ দীর্ঘদিন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলার কারণে প্রাইভেট কনস্ট্রাকশন কোম্পানী সরকারকে কাজ বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব করে। অবশেষে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের ৬টি রেলস্টেশনের নতুন ভবন ও প্লাট ফর্মের কাজ শেষের পথে। এর মধ্যে চিতোষী, মেহের, হাজীগঞ্জ, বলাখাল ও শাহতলী রেলওয়ে স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্মের কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু মধুরোড রেলওয়ে ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণে কাসেম কনস্ট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার সুমনের কারসাজিতে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। ইতি মধ্যে মধুরোড রেল স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণে বেশ কয়েকবার অনিয়মের কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীর তোপে কাজ বন্ধ করা হয়েছে। অবশেষে পুনরায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে কাজ করানো হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মধুরোড রেলওয়ে ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণের সময় নি¤œমানের ইট, খোয়া ও সামগ্রী ব্যবহার করছে। কাসেম কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ ও প্লাটফর্মের কাজ হচ্ছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার সুমনের কারসাজিতে স্থানীয় এক ইটের ব্যাবসায়ী জাহাঙ্গীর গাজির কাছ থেকে নি¤œ মানের ইট কম মূল্যে ক্রয় করে এনে ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণের কাজে লাগাচ্ছে। এ অনিয়মের দৃশ্য চোখে পড়ায় এলাকাবাসীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানালে, তাদেরকে মামলার ভয় দেখিয়ে জোড়পূর্বকভাবে কাজে অনিয়ম করে যাচ্ছে। স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মানে যে নকশা রয়েছে তা উপেক্ষা করে পুকুর চুরির মতো মাটির নিচে ৩ নাম্বার ইট, কনা ও পাথর ও সামগ্রী ব্যবহার করেছে। নিয়ম অনুয়ায়ী প্লাটফর্মটির দৈঘ্য ১২ শ’ ফুট ও প্রস্থ ১৮ ফুট হওয়ার কথা কিন্তু তারা দৈঘ্য সাড়ে ৭শ’ ফুট ও প্রস্থ ১২ ফুট করেছে। স্টেশন ভবনের পাশ থেকে ৩৩ ফুট দূর পর্যন্ত গাইড ওয়াল করার কথা থাকলেও তা বাইশ ফুট করা হয়েছে। এছাড়া গাইড ওয়াল ৬ ফুট নিচ থেকে উপর পর্যন্ত আড়াই ফুট করার কথা থাকলেও তা ব্যাপক অনিয়ম করে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত উপরে করা হয়েছে তাও নিচে নি¤œ মানের সামগ্রী, ইট ও কনা ব্যবহার করা হয়েছে। রেলস্টেশনের পাশে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ অলি পাটওয়ারীর দোকান থাকার কারণে রেলপক্ষ তা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও দোকানীর কাছ থেকে উৎকোচের বিনিময়ে ভাঙ্গা হয়নি।
পিডব্লিউ বুক লাইন স্থাপনে নি¤œমানের খোয়া ও ইট আনার পর স্থানীয়রা প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রাম ও লাকসাম থেকে রেল কর্তৃপক্ষ এসে তা পরিবর্তন করে নির্ধারিত কোটেশন অনুযায়ী ১ নাম্বার ইট ও সামগ্রী লাগানোর জন্য নির্দেশ দেয়। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, মধু রোড রেলওয়ে স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণের সময় কাসেম কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বে থাকে ইঞ্জিঃ সুমন নিজেই ইটভাটা থেকে ৩ নাম্বার ইট এনে ভবন নির্মাণে কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতিপূর্বে নতুন ভবনে গাইড ওয়াল করার ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে লাকসামের কর্তৃপক্ষ এসএই কার্য রাম নারায়ণ সূত্রধরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিমডেলিং প্রকল্পের আওতায় ৬টি রেলওয়ে স্টেশনের কাজ প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে করানো হচ্ছে। ইতিপূর্বে ৫টির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর কাসেম কন্ট্রাকশন তা রেলপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বাকী মধুরোড রেলওয়ে স্টেশনের কাজ অসম্পূর্ণ থাকার কারণে তা প্রায় এক বা দেড়মাসের মধ্যে বুঝে নেয়া হবে। কিছু অনিয়ম হওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার স্থগিত হওয়ায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে যদি এরপরেও অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাসেম কনস্ট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার সুমনের সাথে আলাপকালে রেলওয়ে ভবন ও প্লাটফর্ম নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সদোত্তর না দিয়ে বিষয়টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান এবং মোবাইলের সংযোগটি কেটে দেন। এরপরে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল কলটি রিসিভ করেনি।
সচেতন মহলের অভিমত চাঁদপুর-লাকসামের নতুন রেলপথ ও ভবন নির্মাণের এসব দুর্নীতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করলে দুর্নীতির আসল রহস্য ও মূল দুর্নীতিবাজের নাম বেরিয়ে আসবে।