চাঁদপুর নিউজ রিপোর্টার: আদুরী ফিরে গেছে তার পরিবারের কাছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে আদুরী বলে, আমাকে যে নির্যাতন করেছে সেই গৃহকর্ত্রী নদীর বিচার চাই আমি। সে আমাকে আয়রন দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো। ব্লেড দিয়ে শরীর কাটতো। মরিচ দিয়ে পচা ভাত খেতে দিতো। এখন আমি ভাল আছি। বিলকিস আপা আমাকে অনেক আদর করেছে। উকিল আপারা আমাকে কাপড় দিয়েছে। হাসপাতালের আপারা আমাকে আপেল কমলা খেতে দিতো। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে এসব কথা বলে পল্লবীর ডিওএইচএসের ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া গৃহকর্মী আদুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আদুরীর মা সাফিয়া বেগম, আদুরীর বড় বোন তানিয়া ও খালা খালেদা। সাফিয়া বেগম বলেন যে আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মেয়ের মতো যাতে আর কেউ এরকম নির্যাতনের শিকার না হয়। তিনি আরও বলেন, আমার ৯টি ছেলেমেয়ে। পিতাহীন এ ছেলেমেয়েগুলোর জন্য আপনাদের কাছে সাহায্য চাই। যাতে করে আমার ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে পারি। অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আদুরীকে আমরা প্রথমে পেয়েছিলাম হাড্ডিসার অবস্থায়। সে আমাকে দেখলে ভাত খেতে চাইতো। আমরা তাকে ফল খেতে দিলেও সে আমাদের কাছে ভাত খেতে চাইতো। দীর্ঘদিন ধরে তাকে ভাত খেতে দেয়া হয়নি বলেই মনে হয়েছে। আমি সেদিনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, যেভাবেই হোক আদুরীকে সুস্থ করে তুলতে হবে। এজন্য আমি হাসপাতালের সব সিনিয়র ডাক্তার ও অধ্যাপককে নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করি। যখন হাসপাতালে এসেছিল তখন দাঁড়াতে পারতো না, আজকে সে ১৭ কেজি থেকে ২৫ কেজি ওজনে এসেছে। এখন সে হাঁটতে, দাঁড়াতে পরে। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমরা স্বল্প পরিসরের জনসংখ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেক সফলতাও রয়েছে। আমাদের কাজে সব সময়ে আপনাদের সহযোগিতা চাই। তখন পরিচালক আদুরীকে সাহায্য করার জন্য একটা ঠিকানা বলেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা হলো- হিসাবের নাম শাফিয়া বেগম, জনতা ব্যাংক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর-২৫৬০৫। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজিউল হক, ওয়ানস্টেপ সার্ভিস সেন্টারের প্রধান ডা. বিলকিস বেগম, উপ-পরিচালক ডা. মুশফিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত ২৩শে সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী আদুরীকে অজ্ঞান অবস্থায় ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ। পরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশু আদুরীর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তাকে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ২৬শে সেপ্টেম্বর আদুরীর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। আদুরীর মামা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় পুলিশ নদীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
শিরোনাম:
সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।