শাহরাস্তি প্রতিনিধি ঃ
শাহ্রাস্তিতে ছোট ভাইয়ের গুম-খুনের হুমকিতে বড় ভাই নিজগৃহ থেকেও পরবাস এবং তিন সন্তানের শিক্ষা জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ১০টায় উপজেলার টামটা উত্তর ইউপির বলশিদ দৈলবাড়ি গ্রামের বোয়াইল্লা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পরিবারটি ভাই কর্তৃক গুম ও হত্যার হুমকি আতংকে নিরাপত্তা চেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানায়, ওই বাড়ির মৃত আবদুল মমিনের পুত্র মোঃ রফিকুল ইসলাম ৯ বছর পূর্বে জীবিকার প্রয়োজনে মরুর দেশ দুবাইতে পাড়ি জমায়। এভাবে পরিবারটির স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। পরিবারের উন্নতি হলেও ২০০৬ সালে অসুস্থ রেখে যাওয়া পিতার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতি হতে থাকে। যার জন্য দেখাদেয় সেবাশুশ্রুষার। ওই কাজে পরিবারের অন্য সদস্যদের অবহেলায় প্রবাসি রফিকের স্ত্রী নাজমা আক্তার লিপি শ্বশুড়ের দেখভালের দায়িত্ব নেয়। এভাবে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ি পিতার আর্থিক ও চিকিৎসার ভার বড় ছেলে রফিক একাই গ্রহন করে। এতে মৃত্যুর পূর্বে পিতা বড় ছেলে রফিককে ২.৭৬ একর ও পুত্রবধু নাজমার নামে ৪৮ শতক নিজ ক্রয়কৃত সম্পত্তি চিতোষী এসআর অফিসে সাব-কবলা রেজিষ্ট্রি করে দেন। এরই মধ্যে রফিকের পিতা ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ৫ মাস পূর্বে রফিক দেশে ফিরে আসে। আসার পূর্বে তার বাবা মুঠোফোনে তার পরিবারকে ৩শত ২৪ শতক সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার কথা অবহিত করেন। ওই কথার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে রফিক তার নামে ওই সম্পত্তি দেয়ার সত্যতা খুঁজে পায়। এতে নেমে আসে পরিবারে অশান্তি। এ কথা এক কান দু কান করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ও বড় বোন ফাতেমা বেগম জানতে পারে। সম্পত্তি দেয়ার কথা জেনেই ছোট ভাই ও বড় বোন সম্পত্তি হস্তান্তরের বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে গ্রাম্যসালিশ বৈঠকে দেন-দরবার শুরু করে। তখন সাইফুল কুটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ৩শ টাকার ননজুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে অঙ্গিকারনামার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ দুবাই ফেরত বলে রফিকের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। যার বিনিময়ে সে আর ওই সম্পত্তি নিয়ে বিবাদে জড়াবে না বলে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এতেও তারা সন্তুষ্ট না হয়ে পুনরায় বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে এ বিষয়ে ৮-১০ বার সালিশ বৈঠক বসলেও তাতে সমাধান মিলেনি।
পরে সাইফুল ইসলাম স্থানীয় মোড়ল ও এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে ওই সম্পত্তি বার বার দখলের চেষ্টা চালায়। দখলে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ রফিকের পরিবারের সদস্যদের গুম, খুনের হুমকি দেয়। ওই আতংকে রফিক তার স্ত্রী, ২ কন্যা ও ১ পুত্রকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার লিপি ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার বরাবরে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরে চাঁদপুর পুলিশ সুপার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আইনি সহায়তা দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। ওই সময় রফিক সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, চাঁদপুরে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৪৫ ধারার বিধানমতে প্রতিকার প্রার্থণা করলে আদালত তা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। ওই আদেশের প্রেক্ষিতে শাহরাস্তি মডেল থানা তফসিলকৃত ভূমিতে স্থিতিবস্থা সহ শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার জন্য উভয়পক্ষকে নোটিশ প্রদান করেন। তারপরও গত শুক্রবার ৩০ ডিসেম্বর সকালে সাইফুল ও ফাতেমা গং ১০-১২ জনের সংঘবদ্ধ দল নিয়ে রফিকের পাকা দালানের ভবনটির কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙ্গে দখলে নেয়। ওই খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত সাইফুল খুঁজে পাননি।
ওই সময় স্থানীয় ডা. কামরুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, আমজাদ ও মোস্তফা জানান, বিবাদমান সম্পত্তিটি রফিকের বিদেশ থাকাবস্থায় তার পিতা পরিবারের অন্য সদস্যদের অবহেলার শিকার হয়ে স্বেচ্ছায় বড় পুত্র ও পুত্রবধুকে সাব-কবলা রেজিষ্ট্রি দিয়েছে বলে আমরা জানি। এছাড়া পরিবারটির দুর্দিনে প্রতিপক্ষ সাইফুলের বিদেশ যাওয়া ও স্ত্রী ঘটিত জটিলতার সমাধানের যাবতীয় খরচ রফিকই বহন করে।
এতে রফিক তার স্ত্রী ও কলেজ পড়–য়া মেয়ে ফারজানা আক্তার (১৭), স্কুল পড়–য়া তানিয়া আক্তার (১৫) ও আজহারুল ইসলাম রিয়াজকে (১০) নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। তার ছোট ছেলে রিয়াজ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের বই উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেনি। অন্যদিকে দুই মেয়ে ফারজানা ও তানিয়ার বই পুস্তক দখলকৃত ঘরে আটকে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ রফিক ও তার স্ত্রী নাজমা আক্তার জানায়, আমরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকতে আমাদের মাথা গুঁজাবার ঘরটুকু ও সন্তানদের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরে পেতে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করছি।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৬ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।