আমাদের চারিদিকের বস্তুনিষ্ট ও নিরপেক্ষ সংবাদ সহজ ভাবে জনসাধারণের সম্মুখে প্রকাশ করাই সাংবাদিকতা।
সোর্স নিয়োগে সতর্কতাঃ তিনিই হবেন একজন জনপ্রিয় সাংবাদিক যার রয়েছে সর্বস্ত্মরে সোর্স। তবে সোর্স নিয়োগের ক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হবে বিশেষ সতর্কতা। সোর্স নিয়োগের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার জ্ঞান কতটুকু এবং তিনি এ সংবাদের ব্যাপারে কতটা নিরপেক্ষতা যাচাই করে নিতে হবে। না হলে ভুল তথ্যের জন্য আপনার কষ্ট করে লেখা সংবাদটি গ্রহণযোগ্য হারাতে পারে। আপনার সম্পর্কেও মানুষের জন্মাতে পারে ভ্রান্ত্ম ধারণা।
সংবাদ লেখার সহজ উপায়ঃ আধুনিক ইলেকট্রনিক্স যুগে সংবাদপত্রের পুরাতন ধ্যান ধারণা অনেকটা পাল্টিয়েছে। সংবাদ লেখার অনেক নিয়ম কানুনেরও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তবে সংবাদ লেখার প্রথমেই ঠিক করে নিতে হবে ”সংবাদ শিরোনাম” সংক্ষিপ্তাকারে চমকপদ্র আর লিখতে হবে শিরোনাম, যাতে পাঠকের সংবাদ পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এরপরে লিখতে হবে”সূচনা সংবাদ”। ইংরেজীতে যাকে ইনট্রো বলে। সূচনা সংবাদ হলো পুরো সংবাদের সংক্ষিপ্ত সার। সূচনা সংবাদ পড়েই পাঠক বুঝতে পারবে সংবাদের পুরো বিষয়বস্তু। সংবাদ লেখার শব্দ ও বাক্য হতে হবে সহজ সরল ও বোধগম্য। ছোট ছোট বাক্যে সাবলীল ভাষায় লেখা হলে পাঠকরা পড়ে স্বস্ত্মি পাবে। সংবাদটি অবশ্যই তথ্য নির্ভর হতে পারে। অনুমান কিংবা আবেগের কোন স্থান নেই এখানে। সংবাদের মধ্যে যিনি যত বেশী তথ্য সংযোজন করতে পারবেন তার সংবাদটি পাঠকের কাছে তত বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।
বলা যাবেনা আজ কোন সংবাদ নেইঃ খুন-খারাপি, ধর্ষণ,ক্রস, বোমা হামলা, আত্মহত্যা, অপহরণ, সংঘাত, সংঘর্ষ দূর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, গ্রেফতার, অগ্নিকান্ড না ঘটলে সেদিন আমরা বলে থাকি আজ কোন সংবাদ নেই। একজন পেশাদার সংবাদিকের জন্য এই কথাটি বড়ই লজ্জাকর। আমি ট্রেনিং ক্লাসে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের নিকট শুনেছি, যিনি পেশাদার সাংবাদিক তিনি ভূলেও বলতে পারবেন না আজ কোন সংবাদ নেই। প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাই শুধু সংবাদ নয়। আমাদের চারেপাশে যে কোন সমস্যাই হতে পারে সংবাদ। ” পৌরসভার ড্রেন পরিস্কার না করার কারণে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে নাগরিকরা অতিষ্ট”ভাবুন তো এটা কি কম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ?
ক্রাইম রিপোর্ট লেখার কৌশলঃ ক্রাইম রিপোর্ট সংবাদ পত্রের জন্য একটি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। ক্রাইম রিপোর্ট একজন সাংবাদিককে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে। আবার ভুল তথ্যের কারণে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বিড়ম্বনার শিকার হতে পারে। তাই ক্রাইম রিপোর্ট লেখার আগে সাংবাদিককে চরম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যা করতে হবে তা হলো, যার যা যাদের বিরুদ্ধে যে তথ্য আছে তা গোপনে সংগ্রহ করতে হবে। সম্ভব হলে সকল ডকুমেন্ট(ছবি, পেপার) নিজ আয়ত্বে আনতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করা শেষ হলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বক্তব্য গ্রহণ করতে হবে (বক্তব্য ক্যাসেট বন্দী করতে পারলে ভালো হয়)। সাংবাদিকের নিজের কোন কথা সংবাদের মধ্যে সংযোজ না করাই উচিত। ডকুমেন্ট ও সূত্রের কাঁধে ভর করেই সংবাদ লিখতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যক্তব্য সংবাদের মধ্যে গুরুত্ব সহকারে লিখতে হবে। প্রতিবেদকের কাছে যদি তাঁর বক্তব্য খন্ডন করার মত উপযুক্ত প্রমাণ থাকে তাহলে”প্রতিবেদকের ভাষ্য” হিসেবে তা সংবাদের মধ্যে উপস্থাপন করা বাঞ্চনিয়।
সংবাদ লেখা ও প্রকাশের পর সাংবাদিকের করণীয়ঃ সংবাদ লেখার পর কমপক্ষে একবার ভালভাবে পড়বে হবে। বানান ভুল হলে, তথ্য বাদ পড়লে বা বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে তা সংশোধন করে পত্রিকায় পাঠাতে হবে। প্রেরিত সংবাদের ফটোকপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর মিলিয়ে দেখতে হবে। লেখা সংবাদটি হুবহু ছাপা হয়েছে নাকি এডিট করা হয়েছে। যদি এডিট করা হয়ে থাকে তবে পরবর্তীতে সংবাদ লেখার সময় ক্রটিগুলো সংশোধণ করা সুবিধা হবে।
সম্মানী সাংবাদিক হওয়াঃ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদই একজন সাংবাদিককে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি অগ্রহণ্য। এছাড়া ভালো রিপোর্টার বা সাংবাদিক হতে হলে নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। যে সংবাদগুলো তথ্য হিসেবে ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিনের ঘটনা ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বিষয়ে বই পত্র সংগ্রহ করে তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। যে সংবাদগুলো তথ্য হিসেবে ভবিষ্যতে কাজে লা গতে পারে তা সং রক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিনের ঘটনা ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার বিষয়ে বইপত্র সংগ্রহ করে তা নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। সাংবাদিকতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং তাদের লেখা সংবাদ অনুসরণ করতে হবে।
অবশেষে বলা যায় যে, সংবাদই লেখা হোক না কেন তা হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। যিনি সাংবাদিকতার মত মহান পেশার নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তার অধ্যাবসায়, সততা, সহনশীলতা, নিরপেক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যক। তাকে বর্জন করতে হবে লোভ ও লালসা।
লেখক ও সাংবাদিক
মোঃ আবুল বাসার মজুমদার