সাখাওয়াত হোসেন মিথুনঃ
হাজীগঞ্জে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শ্রম বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বেশি। ফলে শ্রমজীবী পরিবারগুলোতে বাড়ছে হতাশা। দেশের অন্যতম কৃষি উৎপাদন ও নির্ভরশীল হাজীগঞ্জ উপজেলার শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ শ্রমজীবী। অবশিষ্ট ৩০ ভাগ জমিদার বংশভূত (ধনী কৃষক)। উল্লিখিত ৭০ ভাগ শ্রমজীবীদের মধ্যে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত কৃষক এবং বাকিরা দিনমজুর বা শ্রমিক। ধনী কৃষক বা জমিদার বংশভূতরা তাদের জমা জমির আয় দিয়েই আরাম আয়েশে দিন কাটায়। আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের অল্প জমির ধান আর বাড়তি কোন ব্যবসা দিয়েই বছর চলে যায়। বাকি দিনমজুর বা শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত ধনী কৃষকদের বাড়িতে কাজ কাম করে বা ভ্যান ভটভটি চালিয়ে দিন পার করেন। অল্প কিছু মানুষ তাদের বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে স্ব স্ব স্থানে শ্রম দিয়ে সেখানকার আয় থেকে বা উপার্জনে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তার পরেও কোন স্থানের মানুষই এখন আর আগের মত ভালো নেই। কারণ হিসাবে জানা গেছে, এ এলাকার প্রধান আয়ের উৎস হল ধান। এ ধান থেকে আয় হলে সকল শ্রেণীর মানুষ খেয়ে পরে বাঁচবে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর আমন ধানে সর্বগ্রাসি পোকা বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) এর আক্রমণে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়। এছাড়া একই বছরে ধান রোপণের পর দীর্ঘ খরায় আমনের ক্ষেতে বাড়তি সেচ খরচ, এরপর ধানের নায্যমূল্য না পাওয়া ইত্যাদি কারণে এ উপজেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস দেখা দেয়। যেখানে ধান প্রতি বিঘায় (৩৩ শতক) ১৮-২০ মণ হয় সেখানে গত বছর প্রতি বিঘায় মাত্র ৮-১২ মণ করে ফলন হয়েছে। এর পরে ধানের দাম ৭শ টাকা মণ থেকে গত বছর কৃষকরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন মাত্র ৫শ টাকায়। একদিকে ধান ওজনে কম অন্যদিকে ধানের দাম প্রতি মণে ২শ টাকা করে কম। এর ভয়াবহ প্রভাব সর্বস্তরে পড়ায় উপজেলার হাট বাজার ও মোড়গুলোতে মরুদ্যানে পরিণত হয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের বেচা কেনা অনেকাংশে কমে গেছে বলে তারা জানান। তবে এর প্রভাব বেশির অংশটাই পড়েছে শ্রমবাজারে। কৃষির অর্থনীতিতে ধস নামায় কৃষকদের মাঝে আর্থিক অভাব অনাটন দেখা দেয়ায় তারা নিজের কাজ নিজেই করছেন। আর ঐসব কাজে পূর্বে নিয়োজিত শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বর্তমান সময়ে সকল ধরনের ধান রোপণ করতে মাত্র এক মাসেরও কম সময় লাগছে। ফলে বছরের অন্যান্য সময় কোন কাজ না থাকায় উল্লিখিত ঐ সকল ধান কাটা মাড়াইয়ের অপেক্ষা করে বসে থাকতে হচ্ছে শ্রমিক বা দিন মজুরদের। এতে তারা অভাব আর অনাটনের মধ্যে পড়ে দরিদ্র থেকে হতদরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। যার ফলে তাদের পরিবারে আর্থিক অভাব আর অনাটনে ভোগান্তির মাত্রা চরম থেকে চরমে উঠেছে।
শিরোনাম:
রবিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।