মোঃ রেজাউল হক
বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র বিরাজ করছে চরম অশান্তি।ও অস্থিরতা ।এই অস্থিরতার পিছনে যে সব শক্তির হাত রয়েছে এবং যে সব কারনে এ অশান্তির আগুন দিন দিন কেবল বেড়েই চলছে, সে সবের মধ্যে অর্থনৈতিক কারন সমূহ বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ্অল্লাহ পাকের কালাম ও তাহার প্রিয় সত্যবাদি রাসূল(সাঃ) এর হাসিদ সমূহে ধন সম্পদ আল্লাহর রাহে খরচ করিবার ব্যপারে এত বেশি উৎসাহিত করা হইয়াছে যে যাহার কোন সীমারেখা নাই। এ সব পর্যালোচনা করিলে মনে হয় যে, ধন সম্পদ নিকটে রাখার বা সঞ্চিত করিবার কোন বস্তুই নহে বরং আল্লাহর রাস্তায় অকাতরে দান করিবার জন্যই যেন এই সবের সৃষ্টি । মহান আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা থেকে খরচ কর। তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই অন্যথায় অনুতাপ অনুশোচনা করে বলতে হবে, হে পরোয়ারদিগার! আমাকে যদি অল্প কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দিতে তাহলে আমি দান সদকা করতাম এবং নেক লোকদের একজন হতাম। কিন্তু কারো মৃত্যুর নিধারিত সময় আসার পর আল্লাহ তাকে কিছুই অবকাশ দিবেন না। আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ সর্ম্পকে ভালভাবে ওয়াকেফহাল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ আরো বলেন কোন প্রার্থীকে কোন সময় ধমক দিও না। কেয়ামতের ময়দানে প্রশ্ন করা হবে তোমাদের আজ কিসে এই ভয়াবহ আযাবে উপনিত করেছে। তারা বলবে আমরা নামাজীদের দলে সামীল ছিলাম না, অভাবী (ক্ষুদার্ত) ব্যক্তিদের আমরা খাবার দিতাম না। হযরত আবু হোরায়রা (র:) হতে বর্ণিত রাসুল ( স:) বলেন আদম সন্তান মারা গেলে তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশ্য তিনটি আমল বিচ্ছিন্ন হয় না।১) সদকায়ে জারিয়া ( যার উপকার চলমান থাকে) উপকারী এলেন ও নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে এরশাদ করেন
………………………………. সুরা বাকারার প্রথমে অর্থ এই কোরআন মজিদ ঐসব আল্লাহ ভীরুদের জন্য পদ প্রদর্শক যাহারা অদৃশ্যর বস্তু সমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামাজ কায়েম করে ও আমার প্রদত্ত রিজিক হইতে কিছুটা দান খয়রাত করে আর যাহারা আপনার উপর নাজিলকৃত কিতাব ও আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বের প্রতি নাজিলকৃত কিতাবসমূহের উপর বিশ্বাস করে এবং আখিরাতের উপরও রহিয়াছে তাহাদের অটল বিশ্বাস তাহারাই আল্লাহর প্রদত্ত সত্যপথের পথিক এবং তাহারাই প্রকৃত সফলকাম। (বাকারা ১-৫) আল্লাহর মহব্বতে ধন সম্পদ ব্যয় করিবার অর্থ হলো মাল ব্যয় করিবার মধ্যে তাহাদের উদ্দেশ্য হইল একমাত্র আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি। লোক দেখানো মান মর্যদা বা সুনাম বৃদ্ধির আশায় দান করেনা। কারন এমন অবস্থায় নেকির পরিবর্তে পাপের বোঝাই ভারী হয়ে যায়।প্রিয় নবী ( সাঃ) এরশাদ করেন।আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক সুরত এবং মালের প্রতি দৃষ্টি পাত করেন না। বরং তোমাদের আমল এবং অন্তরের প্রতি লক্ষ্য করেন যে, তোমরা কোন নিয়তে আর কোন এরাদায় দান করিতেছ। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র আল কোরআন শরীফে এরশাদ করেন লোকজন আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে কতটুকু দান করিতে হইবে? আপনি বলিয়া দিন যে, যতটুকু তোমাদের প্র্রয়োজনের অতিরিক্ত ( বাকারা-২১৯) হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ) বলেন নিজের পরিবার পরিজনের উপর খরচ করিয়া যতটুকু উদবিত্ত থাকিবে উহাকেই বলা হয় অতিরিক্ত । হযরত ছালেম বিন আবিল জাদ বর্ননা করেন যে জনৈক মহিলা স্বীয় বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও যাইতে ছিল।পথিমধ্যে একটি নেকড়ে বাঘ থাবা মারিয়া তাহার বাচ্চাকে নিয়া গেল। সে বাঘের পিছনে ধাওয়া করিল ইত্যবসরে এক ভিক্ষুক তাহার নিকট কিছু চাহিলে সে নিজের জন একমাত্র রুটি খানা ভিক্ষুককে দান করিয়া দিল। সঙ্গে সঙ্গে নেকড়ে বাঘ ও তাহার বাচ্ছাকে তাহার সামনে রাখিয়া চলিয়া গেল। হুজুর (সাঃ) বলেন যাহারা দয়ালূ আল্লাহ তাহাদের উপর দয়া করেন। দুনিয়াবাসীদের উপর তোমরা দয়া কর আছমান ওয়ালাও তোমাদের উপর দয়া করিবেন। আর একটি হাদীসে আছে যে ব্যক্তি কোন বিপদ গ্রস্তকে সাহায্য করিল তাহার জন্য মাগফেরাতের ৭৩ দরজায় নেক লেখা হয় তার মধ্যে একটি তার গোনাহ মাফের জন্য। অবশিষ্ট ৭২টি হলো তার মর্যদা বৃদ্ধির জন্য। আল্লাহ বলেন তিনি আল্লাহ যিনি পৃথিবীতে তোমাদের কে খলিফা বানিয়েছেন। এবং তোমাদের একজনকে আরেক জনের উপর শেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো তিনি যা কিছু দিয়েছেন।এভাবে তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ পাক বলেন যাহারা স্বীয় ধনসম্পদ রাত্রে এবং দিনে গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করিয়া থাকে তাহাদের প্রতিদান আপন প্রতিপালকের নিকট সুরক্ষিত থাকিবে আর তাহারা ভয়শূন্য চিন্তা মুক্ত থাকিবে। (বাকারা -আয়াত -২৭৪), হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন ছদকা কখনও মালকে ঘাটাইয়া দেয় না। অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করিয়া দিলে ক্ষমাকারীর মান মর্যদা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয় এখতিয়ার করিলে আল্লাহ পাক তাহাকে উচ্চ মর্যদা দান করেন। (মিশকাত ও মুসলিম)।
বাহ্যিক দৃষ্ঠিতে ছদকা দ্বারা যদিও সম্পদ ক্ষয় হইতে দেখা যায় কিন্তু প্রকৃত পক্ষে উহা দারা আখেরাতের উত্তম বদলা আছেই। দুনিয়াতে ও মান বাড়িয়া যায়। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন ভোর বেলায় আসমান হইতে দুইজন ফেরেস্তা অবতরন করে তন্মেধ্যে একজন দোয়া করেন হে আল্লাহ যে তোমার পথে দান করে তাহাকে প্রতিদান দাও আর যে কৃপনতা করে তাহার মাল ধ্বংস করিয়া দাও । হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন কোন এক কুয়ার ধারে ভীষন তৃঞ্চায় মৃত প্রায় হইয়া একটি কুকুর জিহ্বা বাহির করিয়া হাফাইতে ছিল। জনৈক পতিতা নারী ইহা দেখিয়া পায়ের মুজা খুলিয়া ওড়নায় বাধিয়া কুয়া হইতে পানি উঠাইয়া কুকুরকে পান করায়। ইহাতে তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হইয়া যায়।কেউ জিজ্ঞাসা করিল হুজুর চতুস্পদ জন্তুর ব্যপারে ও কি আমরা ছওয়াব পাইব? হুজুর (সাঃ) বলেন- যান ওয়ালা যে কোন মাখলুকের উপর এহছান করিলে ( চাই মানুষ হোক চাই জীবজন্তু হোক। (মেশকাত ও বুখারী ,মুসলিম) ছদকা তো কেবল নিঃস্ব অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য যাহাদের চিত্ত আকর্ষন করা হয় তাহাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋন ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য ইহা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। সুরা তওবা।
তাই আসুন মৃত্যুর আগে নফল ছদকা করে দুনিয়ার সফলতা ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করি আমিন।
মোঃ রেজাউল হক
শিরোনাম:
শনিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।