চাঁদপুর নিউজ
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবার স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন । গতকাল এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা যায় । ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় এ পুরস্কার প্রদান করবেন। স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হলো ঃ
সাধারণ তথ্য ঃ নাম- লেঃ কর্নেল (অবঃ) মোঃ আবু ওসমান চৌধুরী, শিক্ষাগত যোগ্যতা- বি,এ (পাস) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৭), জন্ম তারিখ- ১৯৩৫ সালের ১ জানুয়ারি, জন্ম স্থান- মদনেরগাঁও, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর, ধর্ম- ইসলাম, জাতীয়তা- বাংলাদেশী বর্তমান পদবী ও দায়িত্ব গ্রহণ ঃ চাঁদপুর জেলা পরিষদে প্রশাসক হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর ২০১১ থেকে বর্তমান অবদি পর্যন্ত।
পূর্ববর্তী চাকুরি সংক্রান্ত তথ্য ঃ সেনাবাহিনীতে যোগদান- ২ জানুয়ারি ১৯৫৮, সেনা বাহিনীতে কমিশন (পাকিস্তান)- ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান- ২৬ মার্চ ১৯৭১, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে (মুক্তিযুদ্ধ কালীন)- সেক্টর কমান্ডার, ৮নং সেক্টর (কুষ্টিয়া থেকে খুলনা পর্যন্ত), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালন- সহ-পরিচালক, পে এন্ড পেনশান (মেজর), সহকারি পরিচালক, সরবরাহ ও যান (লেঃ কর্নেল) এবং পরিচালক, সরবরাহ ও যান; সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণের তারিখ- ১৬ জুলাই ১৯৭৬, অবসর পরবর্তী নিয়োগ- চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (রাজনৈতিক) ১৯৯৭-২০০১ (৪ বছর)।
ব্যক্তিগত তথ্য ঃ পিতার নাম- মরহুম আব্দুল আজিজ চৌধুরী; মাতার নাম- মরহুম মাজেদা বেগম; পিতামহ- জমিদার মিয়া রাজা হাজী; স্ত্রীর নাম- মরহুম নাজিয়া ওসমান; সন্তান সংখ্যা- মেয়ে- (১) নাসিমা ওসমান (চম্পা), (২) ফওজিয়া ওসমান (কলি); অন্যান্য আত্মীয় স্বজন- বড় জামাই- ডাঃ তারেকউদ্দিন আহমেদ (শিল্পপতি), ছোট জামাই- মোঃ ইসমাইল মনসুর (বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাসরত)।
বর্তমান ঠিকানাঃ চাঁদপুরে- স্ট্র্যান্ড রোড, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর এবং ঢাকায়- বাড়ি- ২৭/এ, সড়ক- ১২/এ, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা- ১২০৯।
স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রামঃ মদনেরগাঁও, পোঃ চান্দ্রা, থানা/উপজেলা- ফরিদগঞ্জ, জেলা- চাঁদপুর এবং গ্রামঃ রসুলপুর, পোঃ খানখানাপুর, থানাঃ রাজবাড়ী সদর, জেলাঃ রাজবাড়ি।
সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচিতি ঃ তিনি ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। ঢাকাস্থ ফরিদগঞ্জ থানা সমিতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, তাঁর নিজ জন্মস্থান ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে। তিনি চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের কলেজ শাখার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরুপে ফরিদগঞ্জের শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে এক ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। ‘সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম-এর একজন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং এ ক্ষেত্রে তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের এই বীর সেনানী ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসে নিজ উপজেলার সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ নিরস্ত্র জনগণের তালিকা সম্বলিত অপূর্ব সুন্দর ‘ফরিদগঞ্জ-শহীদ-স্মৃতিস্তম্ভ’ প্রতিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশ ছাত্রকল্যাণ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও তাঁর অবদান অনন্য। বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনে থাকাকালে তিনি বিভিন্ন জাতীয়/আর্ন্তজাতিক টুর্নামেন্ট পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা এবং ঢাকাস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব/সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে দেশ ও দশের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
বিদেশ ভ্রমন ঃ তিনি তাঁর সু-দীর্ঘ জীবনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছেন। তন্মমধ্যেঃ অষ্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্ডান, ঘানা, আইভরি কোস্ট, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম উল্লে¬খযোগ্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালী জাতি অর্জন করেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অন্যতম সংগঠক ও দক্ষিণ পশ্চিম রনাঙ্গণে ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে (বৃহত্তর কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা) দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে বিশ্বের ৩৯টি দেশের শতাধিক সাংবাদিকদের উপস্থিতে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার বর্তমান মেহেরপুর জেলার অর্ন্তগত বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে বাংলার জনগণের উপস্থিতিতে (বর্তমান মুজিব নগর) শপথগ্রহণ করেন। এ শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ প্রকাশ্যে বাংলার মাটিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উক্ত শপথগ্রহণ ও দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর যুদ্ধক্লান্ত এক প¬াটুন ইপিআর সৈন্য দ্বারা মন্ত্রী পরিষদকে গার্ড-অব-অনার প্রদান করেন। যুদ্ধক্লান্ত উল্লেখযোগ্য যে, সেই অনুষ্ঠানে তাঁর স্ত্রী বেগম নাজিয়া ওসমান সারা বাংলার নারী জাতিরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ও তাঁর অধীনস্থ মুক্তিবাহিনী রণাঙ্গণের বিভিন্ন যুদ্ধে সাফল্য ও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এ মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন সফল অধিনায়ক ও সংগঠক। ২৬ মার্চ তিনি তাঁর কর্তৃত্বাধীন তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) বাহিনীর সেনা ও এলাকার জনগণের সমর্থন সহকারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে পদ্মা-মেঘনার পশ্চিমের ভূখন্ডকে দক্ষিণ-পশ্চিম রনাঙ্গনের নামকরন করে তার সর্বদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২৭ মার্চ ৭১ তাঁর এলাকার একটি খন্ডযুদ্ধে পাকিস্তানী একজন ক্যাপ্টেনসহ ৪জন পাকিসৈনিকের মৃত্যুর পরই তিনি কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাকি বাহিনী ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টকে আক্রমনপূর্বক নিশ্চিহ্ন করে কুষ্টিয়া জেলাকে শত্রুমুক্ত করেন।
লেখা বই/প্রবন্ধ ও অন্যান্য প্রকাশনা ঃ ১৯৪৭ এর স্বাধীনতা থেকে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা উত্তরণের ধারাবাহিক ইতিহাস ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বইখানি ১৯৯৩ সালে অন্যতম শ্রেষ্ঠগ্রন্থ হিসেবে ‘বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ’ কর্তৃক পুরস্কৃত হয় এবং একই সনে আলাওল সাহিত্য পুরস্কারও লাভ করে। তাঁর তত্ত্বাবধানে ‘এক নজরে ফরিদগঞ্জ’ নামক একখানি তথ্য বহুল গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তিনি ‘সময়ের অভিব্যক্তি’ নামক একটি বই সংকলন করেন। বইটি ১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট প্রকাশিত হয়। সোনালী ভোরের প্রত্যাশা এবং ‘শতাব্দীর মহানায়ক’ নামেও দু’টি সংকলন ঐ বৎসরই প্রকাশিত হয়। প্রকাশনা দু’টি পাঠক সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগায়। সাংবাদিক ও শিল্পসমালোচক রফিক ইসলাম কর্তৃক তাঁর জীবনি নিয়ে ‘ঐব ঋড়ঁমযঃ ভড়ৎ ঃযব গড়ঃযবৎষধহফ’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি অসলো থেকে স্বর্ণপদক লাভ করে।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।